নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা। নিজস্ব চিত্র
প্রয়াত হয়েছেন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সিপিএমের সম্পাদক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি মদন ঘোষ (৮১)। বর্ধমানের বাড়িতে শুক্রবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে প্রয়াত হন তিনি। রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, এক মেয়ে-জামাই ও নাতনি। এ দিন বিকেলে পূর্ব বর্ধমানের জেলা কার্যালয়, বর্ধমানের পার্কাস রোডে তাঁর দেহে মালা দেন দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, রবীন দেব, শতরূপ ঘোষেরা। শ্রদ্ধা জানান বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মরণোত্তর দেহদান করা হয়।
মৃত্যুর দু’দিন আগেও, বুধবার অন্ডালের খান্দরায় দলের কাজে গিয়েছিলেন মদনবাবু। বাম নেতা রবীন সেনের জন্মশতবর্ষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। সেখান থেকে ফিরেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কমিউনিস্ট আন্দোলনের এক জন পুরোধাকে আমরা হারালাম। মদনদা, নিরুপমদারা আমাদের অভিভাবক ছিলেন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, “মদনদা তো শুধুমাত্র বর্ধমানের নয়, গোটা রাজ্য জুড়ে তাঁর কাজকর্ম ছড়িয়ে ছিল।’’
সিপিএমের নেতাদের একাংশের দাবি, মদন ঘোষই একমাত্র নেতা, যিনি জেলার সর্বোচ্চ সরকারি পদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে সরাসরি দলের জেলার সর্বোচ্চ পদ সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত অবিভক্ত বর্ধমানের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিপিএমের জেলা সম্পাদক ছিলেন। তারপরে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। সিপিএম সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৯ সালে তিনি দলের সদস্য হন। মূলত বর্ধমান শহর-সংলগ্ন এলাকা জুড়ে কাজ করতেন। ১৯৭৩ সালে জেলা কমিটিতে ঢোকেন তিনি।
সিপিএমের এক নেতার কথায়, “বর্ধমান জেলায় সিপিএমের বুথ ভিত্তিক সংগঠন যে বিস্তৃতি লাভ করেছিল, তা মূলত মদনদার আমলেই। তিনি জেলা সম্পাদক হওয়ার পরেই বুথ ভিত্তিক সংগঠনে জোর দিয়েছিলেন। দলের শিক্ষাকেন্দ্র গড়তেও উদ্যোগী হন।’’ জেলা সভাধিপতি হিসেবে সংস্কৃতি লোকমঞ্চ তৈরিতে তাঁর ভূমিকা ছিল। দলের মুখপত্র থেকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখতেনও।
সিপিএম নেতা জনার্দন রায়ের কথায়, “সাক্ষরতা আন্দোলন, জনস্বাস্থ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে একাধিক সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মদনদার ভূমিকা অনস্বীকার্য।’’ বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন বাম কাউন্সিলর অপূর্ব দাসও বলেন, “শরিক দলগুলির সঙ্গে মদনদা সুসম্পর্ক রেখে চলতেন।’’ রাধারানি স্টেডিয়াম তৈরিতেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন বর্ধমানের একটি ক্লাবের কর্তা তন্ময় সামন্ত। বর্ধমান চালকল সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মালেকও বলেন, “মদনদা যে কথা দিতেন, রাখতেন। ছলচাতুরি করতেন না।’’