ডিওয়াইএফের সভা ভিড়, বর্ধমান শহরে। নিজস্ব চিত্র
বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এক মাসের মধ্যে গ্রামসভা না বসলে ‘গণ প্রতিবাদের’ ডাক দেওয়া হবে বলে রবিবার জানিছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথার রেশ টেনে, সোমবার বর্ধমানের কার্জন গেটে ডিওয়াইএফের এক সভায় তৃণমূলকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় জানালেন, পঞ্চায়েত ভোটে বাধা পেলে ‘প্রতিবাদ’ হবে।
শিক্ষায় দুর্নীতি থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট— বক্তৃতায় ডিওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী ছুঁয়ে গিয়েছেন অনেক কিছুই। শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারীতে তৃণমূলকে বিঁধে তিনি বলেন ‘‘চাকরি পেতে মেধা লাগে না। যোগ্যতা লাগে না।’’ অনিস খানের ‘খুনের’ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘২১৮ দিন হয়ে গেলেও খুনিরা সাজা পায় না। তাই আমরা ২১৮টি সভা করব। এটি চোরেদের জেলে ভরার সভা। চোরেদের বিরুদ্ধে এক কোটি সই সংগ্রহ করা হবে।’’ এর পরেই নাম না করে তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মীনাক্ষীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘কর্মসূচিতে কোনও বাধা মানা হবে না। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাধা দিলে তীব্র প্রতিবাদ হবে।’’ ‘শাসক দলের’ হয়ে কাজ করা পুলিশ আধিকারিকদেরও এক হাত নেন তিনি।
কার্জন গেটে রাজারানির মূর্তি বসানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সে প্রসঙ্গে সিপিএমের যুবনেত্রীর মন্তব্য, ‘‘অনেক কষ্ট করে দেশে স্বাধীনতা এসেছে। স্বপ্ন দেখলাম, আর রাজারানির মূর্তি এনে কার্জন গেটে বসিয়ে দিলাম, এ ভাবে স্বাধীনতা আসেনি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধে মীনাক্ষী বলেন, ‘‘রাজ্য-কেন্দ্র, দিদি-মোদি সেটিং করে ধর্মে-ধর্মে বিভাজন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছে।’’
গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মীনাক্ষী। বলেন, ‘‘আমরা অনুব্রত নিয়ে কিছু বলব না। গরু চোর নিয়ে কেন কিছু বলব? শুধু এটাই বলব যে, মুখ্যমন্ত্রী ও অনুব্রতরা বোঝাতে পেরেছে, চাকরি পেতে গেলে ‘দিদি’ আর টাকা লাগে।’’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগে সরব এসএফআই। এ প্রসঙ্গে মীনাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি হয়েছে। দূরশিক্ষা কার্যক্রম তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই জারি রয়েছে।’’
ডিওয়াইএফের ডাকা সমাবেশে এ দিন নজরকাড়া ভিড় হয়েছিল। ব্যক্তিগত আলোচনায় সে কথা স্বীকারও করেছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই। যদিও তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডু মনে করেন, ‘‘বাইরে থেকে বাসে করে সভায় লোক আনা হয়েছিল। সিপিএমের ছাত্র-যুবদের মিটিংয়ে বুড়োরাও ছিলেন।’’ আর মীনাক্ষীর তোলা অভিযোগগুলি নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিধানসভায় যাদের আসন সংখ্যা শূন্য, তাদের ফাঁকা বুলি মানুষ কেন বিশ্বাস করবেন?’’