Coronavirus

ভবঘুরেদের পাত পেড়ে খাওয়াচ্ছেন আশা-চায়না

কোকআভেন থানার ক্ষুদিরাম কলোনির আশা চট্টোপাধ্যায় ও আশিসনগরের চায়না মিস্ত্রি বাড়িতে খাবার রান্না করে ‘অর্ডার’ অনুযায়ী, তা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর ও জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৪
Share:

সম্প্রতি দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডে এ ভাবেই পাত পেড়ে খাওয়ানো হল। তবে করোনা-সতর্কতায় ‘সামাজিক দূরত্ব’ কত দূর মানা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে আগামী দিনে আরও সতর্ক থাকা হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। নিজস্ব চিত্র

‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে সমাজের নানা ক্ষেত্রের মানুষ বিভিন্ন ভাবে এগিয়ে আসছেন। তেমনই দু’জন দুর্গাপুরের মহিলা। তাঁরা বাড়ির রান্না করা খাবার পাত পেড়ে খাওয়াচ্ছেন ভবঘুরেদের। পাশাপাশি, রাস্তার ধারের ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ভবঘুরেদের হাত ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে সাফ করে খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন দুর্গাপুরের দুই যুবকও। জামুড়িয়া, আসানসোল-সহ জেলার নানা প্রান্তেও চলছে এমন নানা কাজ।

Advertisement

কোকআভেন থানার ক্ষুদিরাম কলোনির আশা চট্টোপাধ্যায় ও আশিসনগরের চায়না মিস্ত্রি বাড়িতে খাবার রান্না করে ‘অর্ডার’ অনুযায়ী, তা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তাঁদের ব্যবসা আলাদা হলেও সামাজিক কাজ তাঁরা এক সঙ্গেই করছেন। তাঁরা জানান, ‘লকডাউন’-এর জন্য খাবার সরবরাহের কাজ এখন বন্ধ আছে। তবে তাঁদের ‘কাজ’ বন্ধ হয়নি। এ পর্যন্ত দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় হাজারখানেক ভবঘুরেকে রান্না করার খাবার খাইয়েছেন বলে দাবি তাঁদের। গত রবিবারই দুর্গাপুর স্টেশনে প্রায় আড়াইশো জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। পাতে ভাত, আনাজ, ডাল ও ডিমের তরকারি ছিল।

তবে আশাদেবী ও চায়নাদেবী, দু’জনেই জানান, এই মুহূর্তে রোজগার নেই। অথচ, এই কাজ করতে দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা খরচ। সে জন্য পকেটের টাকা খরচ করতে হচ্ছে। পড়শিরাও সহযোগিতা করছেন।

Advertisement

পাশাপাশি, বেসরকারি সংস্থার কর্মী দুর্গাপুরে হারাধন সরকার ও বিদ্রোহী চট্টোপাধ্যায় সাইকেলে চড়ে কাঁকসার রাজবাঁধ থেকে অণ্ডাল পর্যন্ত জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ভবঘুরেদের ‘স্যানিটাইজ়ার’ দিয়ে হাত পরিষ্কার করিয়ে খাবারের প্যাকেট দিচ্ছেন। গত দশ দিনে প্রায় আড়াইশো জনকে তাঁরা খাবার দিতে পেরেছেন বলে দাবি ওই দু’জনের। রাস্তার মোড়ে কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশকে ঠান্ডা পানীয় ও টিফিনের প্যাকেটও দিচ্ছেন তাঁরা।

এ দিকে, চিচুড়িয়া গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের লক্ষ্মী-জর্নাদন মন্দির কমিটি জানিয়েছে, ‘লকডাউন’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ জন দুঃস্থ মানুষের মধ্যাহ্ন ভোজনের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। পরিবারটি জানায়, বৈশাখে মন্দিরে বিশেষ পুজো আয়োজিত হয়। তা উপলক্ষে মন্দির কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেয়। মন্দিরের পুরোহিত বিশ্বজিৎ রায় রান্নার দায়িত্ব নিয়েছেন। মন্দির কমিটি জানায়, এই কাজে গ্রামের কিছু ব্যক্তি সহায়তা করছেন। পাশে রয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মান্তু চক্রবর্তীও।

এ ছাড়া, আসানসোলের ইস্টার্ন রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি হাইস্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্রের দাবি, কালীপাহাড়ি, মুর্গাসোল, মহিশীলা গ্রাম-সহ নানা এলাকার এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচশোটি পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিতে পেরেছেন তিনি। এই কাজে স্কুলের শিক্ষকেরা, ডিআরএম (আসানসোল) সুমিত সরকার-সহ অনেকেই আর্থিক সাহায্য করছেন। নববর্ষের দিন কুলটির চবকা যৌনপল্লিতে ৯০ জন শিশুর জন্য জলখাবারের ব্যবস্থাও করেন বিশ্বনাথবাবু। সে কাজে তাঁকে সহযোগিতা করছে মহিশীলা অআকখ ক্লাব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement