বাঁশের কঞ্চি, তালপাতার ছিলা জুড়ে ঝুড়ি, হাতপাখা বানিয়েই পেট চলে। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর পর থেকে বাজার বন্ধ। আপাতত কী খেয়ে বাঁচব ভেবেই দিন কাটছে আমাদের।
কেতুগ্রাম ২ ব্লকের নিরোল গ্রামের থান্দার পাড়ায় আমার মতো আরও ১২ ঘর পরিবার বাস করে। ঝুড়ি, হাতপাখা বুনে প্রতি বৃহস্পতিবার পাঁচুন্দির হাটে নিয়ে যাই আমরা। সপ্তাহে ওই এক দিনই বিক্রিবাটা করে রোজগার হয়। ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার পরে বাজার বসছে ঠিকই। কিন্তু বেচাকেনা একেবারে নেই। বাজারও কত দিন বসবে কে জানে!
এক একটা ঝুড়ি বুনতে আড়াই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। যা চাহিদা, তাতে সপ্তাহে সাত-আটশো টাকা রোজগার হয়। বর্ষার আগে মে-জুন মাস নাগাদ মাটির বাড়ির চাল ছাওয়ার কাজ পেলে রোজগার আরও একটু বাড়ে। কিন্তু জমানো টাকা কিছু থাকে না আমাদের ঘরে। আর এখন যেহেতু মেলামেশা একপ্রকার বারণ, তাই কারও কাছে গিয়ে সাহায্য চাওয়ার কোনও উপায় নেই।
পাশের উদ্ধারণপুর, ধান্দলসা, রাউন্দি থেকে বাঁশের কঞ্চি, তালপাতা, নাইলনের দড়ি কিনে আনি। বাঁশঝাড়ের মালিকের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিতে কাঁচামাল নেওয়া হয়। কিন্তু ঘাট পারাপার বন্ধ থাকায় ও পার থেকে কাঁচামালও আনতে পারছি না। ফলে ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ।
বাড়িতে আমি ছাড়া স্ত্রী, ছেলে আছে। ছেলে একটা ছোটখাট দোকান দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও কোনও বিক্রিবাটা নেই। আরও ১৫ দিন ‘লকডাউন’ চলবে শুনেছি। কী করে পেট চালাব জানি না। রেশনে এখনও পর্যন্ত ১৫ কেজি চাল পেয়েছি। আর পঞ্চায়েত থেকে দু’কেজি আলু আর পাঁচশো গ্রাম পেঁয়াজ দিয়েছে। কিন্তু এতে আর ক’দিন চলবে! সাহায্য না পেলে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা খুবই মুশকিল।
ঝুড়ি, হাতপাখা বোনার শ্রমিক