ছবি এএফপি
কাঁধে বড় ব্যাগ নিয়ে হাঁটছেন এক যুবক। তাঁর পিছনে আরও দু’জন। হাঁটতে হাঁটতেই ওই যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘এক হাজার সাতশো কিলোমিটার হেঁটে যাচ্ছি মমতাদি। তোমাকেই আমরা ভোট দেব, কোনও চিন্তা নেই। আমাদের উচালনে ঘর।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হওয়া ওই ভিডিয়োর যুবক মাধবডিহির উচালন পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা রেসিদুল শেখ। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, ওই ভিডিয়োতেই দেখা যাচ্ছে উচালনের আর এক বাসিন্দা শেখ তাইবুলকে। ভিডিয়োটি তোলা হয়েছে শেখ মোজাফ্ফর চৌধুরীর মোবাইলে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ওই তিন জন ও মঙ্গলকোটের দু’জন—মোট পাঁচ জন এক সঙ্গে চেন্নাইয়ে গিয়েছিলেন নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা সীমানায় একটি জায়গা থেকে তাঁরা জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে কয়েকশো কিলোমিটার হেঁটে এসেছেন তাঁরা। তার পরে একটি পণ্যবাহী ট্রাক মিলেছে, যেটি বাংলার সীমানায় নামিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কত টাকা নেবে, তা তাঁদের জানা নেই।
ফোনে রেসিদুলেরা জানান, চেন্নাই থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে ওই ভিডিওটি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘পোস্ট’ করা হয়। এ রকম ভিডিয়ো করার কারণ কী? ফোনে রেসিদুলের বন্ধু পরিচয় দিয়ে হাসিবুল শেখ নামে এক জন দাবি করেন, ‘‘তিন মাস আগে ভিন্ রাজ্যে এসেছিলাম। তার মধ্যে দেড় মাস ‘লকডাউন’ চলছে। হাতে টাকা নেই। পেটে খাবার নেই। ভিডিয়োর মাধ্যমে আমাদের কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়েছে। কোনও খারাপ কথা তো বলা হয়নি।’’
সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘পরিযায়ীদের সম্পর্কে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কতটা উদাসীন, এই ছোট ভিডিয়োটিই তা বুঝিয়ে দিচ্ছে।’’ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর আবার অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকারের গা-ছাড়া মনোভাবের জন্য হাজার-হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে হেঁটে ফিরতে হচ্ছে।’’ তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্তের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সবার আগে উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁদের জন্য প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। তাঁরা যাতে বাড়ি ফিরে এসে কাজ পান, তেমন নির্দেশও দিয়েছেন।’’