মির্জাপুরে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ‘ফুড কুপন’ বিলি নিয়ে ফের বিক্ষোভ হল পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ২ ব্লকে। এ বারের ঘটনাস্থল বড়পলাশন ২ পঞ্চায়েতের মির্জাপুর গ্রাম। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পঞ্চায়েত, ব্লক অফিসে এক দল পরিযায়ী শ্রমিক বিক্ষোভ দেখান। সেখানে আশ্বাস মেলেনি দাবি করে গ্রামে মিছিল করেন। ‘কুপন’ বিলি নিয়ে ‘স্বজনপোষণ’ হয়েছে বলে তাঁদের অভিয়োগ। পুলিশ গিয়ে বিষয়টি নিয়ে ব্লক স্তরে কথা বলার পরে বিকেলে বিক্ষোভ থামে।
মঙ্গলবার রাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘ফুড কুপন’ নিয়ে মেমারির ঝিকরা গ্রামে অশান্তি হয়। তৃণমূলের মেমারি ২ ব্লক সভাপতির বাড়ি ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ করা হয়। ‘ফুড কুপন’ আটকে রাখার অভিযোগে ওই গ্রামের এক রেশন ডিলারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এর আগে মেমারি ১ ব্লকের দুর্গাপুর পঞ্চায়েতেও একই দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখান।
এ দিন সকাল থেকে মির্জাপুরের প্রায় ৩৫০ জন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আরিফ হোসেন, আবুল হোসেন, বাদশা খানদের দাবি, ‘‘গ্রামে প্রায় চারশো জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। তার মধ্যে মাত্র ২৫ জন কুপন পেয়েছেন। বাকি কুপন বিলিতে স্বজনপোষণ হয়েছে।’’ বড়পলাশন পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের নামের তালিকা পঞ্চায়েত পাঠালেও ‘কুপন’ বিলিতে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী (মেমারি ২) মামনি মুর্মু বলেন, ‘‘ওই গ্রামের শ্রমিকদের দাবি মেটাতে আলোচনা করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, মেমারি ২ ব্লক থেকে শ্রমিকদের ‘ফুড কুপন’ প্রথমে পঞ্চায়েতকে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত তা ডিলারকে দেয়। ২৩ জুন বিডিও (মেমারি ২) অনিন্দিতা রায়চৌধুরী সিডিপিও-কে চিঠি দিয়ে জানান, রেশন ডিলারদের কাছ থেকে ‘কুপন’ নিয়ে তালিকা মিলিয়ে শ্রমিকদের দিতে হবে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। এর মধ্যে অনেক শ্রমিককে খুঁজে না পেয়ে ডিলারের কাছে ‘কুপন’ ফেরত দেওয়া হয়েছে, আবার অনেক শ্রমিক পরে গ্রামে ফিরেছেন— এমন নানা ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ। কোনও কোনও ডিলার ফেরত আসা ‘কুপন’ সংশ্লিষ্ট দফতরে ফেরাননি বলেও অভিযোগ। এর জেরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ হচ্ছে বলে প্রশাসনের একাংশের ধারণা।
মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) সুদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘খাদ্য দফতর থেকে দেওয়া ‘বিশেষ কুপন’ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ‘অস্থায়ী কুপন’ নিয়ে ব্লক থেকে বিশদ তথ্য চেয়েছি।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ নিয়ে খাদ্য দফতরও বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। এ দিন সন্ধ্যায় ব্লক অফিসে কী ভাবে পড়ে থাকা কুপন পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে তুলে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ব্লক ২,৯৯০টি ‘কুপন’ পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত কত ‘কুপন’ বিলি হয়েছে, তা জানা যায়নি। বিডিও জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা যাতে ‘ফুড কুপন’ পাওয়ায় বঞ্চিত না হন, তা দেখা হচ্ছে।