ফের কবে চালু হবে কল-কারখানা, তাকিয়ে সব পক্ষই। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে। নিজস্ব চিত্র
কম সংখ্যক কর্মী দিয়ে ক্ষুদ্রশিল্প চালুর অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা-সহ নানা কারণে কাজ শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন দুর্গাপুরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র শিল্পতালুকের কারখানাগুলির কর্তৃপক্ষের একাংশ। এই পরিস্থিতিতে এই পর্বের ‘লকডাউন’-এর শেষ অর্থাৎ, ৩ মে’র পরবর্তী সময়ের দিকে তাকিয়ে তাঁরা।
সোমবার থেকে ‘লকডাউন’ শিথিল করা হয়েছে ক্ষুদ্রশিল্প-সহ কিছু ক্ষেত্রে। ইস্পাত, ‘রিফ্র্যাক্টরি’, ‘প্যাকেজিং’-সহ নানা ক্ষেত্রের বিভিন্ন অনুসারী শিল্পের মোট প্রায় ৬০-৭০টি কারখানা চালু রয়েছে দুর্গাপুরের বিভিন্ন শিল্পতালুকে। ‘দুর্গাপুর স্মল স্কেল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে কৃপাল সিংহ বলেন, ‘‘ক্ষুদ্রশিল্পের উৎপাদনের জন্য খুব জরুরি হল মার্চ মাস। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতি ও লকডাউনের জেরে মার্চেই সব কারখানা বন্ধ করতে হয়েছে। লকডাউন শিথিল হলেও কারাখানাগুলি ফের চালু করার মতো পরিস্থিতি নেই। লকডাউন পুরোপুরি না উঠলে পরিস্থিতি বদলাবে না।’’
কিন্তু কেন এমনটা?
বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথমত, ক্ষুদ্র শিল্পে এমনিতেই কম কর্মী কাজ করেন। সবাই কাজ না করলে উৎপাদন চালু করা প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয়ত, বহু কাজেই এক সঙ্গে সকলকে প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। তৃতীয়ত, ‘লকডাউন’-এর জেরে গণ-পরিবহণ বন্ধ। কর্মীদের অনেকেই আসেন বাইরে থেকে। এই অবস্থায় তাঁদের কর্মস্থলে যাতায়াতেও সমস্যা হবে। কারখানার মালিকদের একাংশ জানান, কর্মীদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা বা কারখানার ভিতরে কর্মীদের রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার মতো আর্থিক অবস্থা ও পরিকাঠামো তাঁদের নেই।
শ্রমিকদের একাংশ জানান, আচমকা ‘লকডাউন’ হয়ে যাওয়ায় সরবরাহ বন্ধ। ফলে, বহু কারখানাতেই উৎপাদিত পণ্য মজুত হয়ে রয়েছে। এ অবস্থায় ফের উৎপাদন শুরুর বাস্তবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকেরা বলেন, ‘‘লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে, যানবাহন চালু হলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহণ শুরু হবে। পণ্যের নতুন চাহিদা তৈরি হবে। তবেই কারখানাগুলিতে আবার আগের অবস্থা ফিরে আসবে।’’ সব মিলিয়ে ‘লকডাউন’ শিথিল করার পরেও দুর্গাপুরের ক্ষুদ্রশিল্প তালুকগুলি ফাঁকাই রয়ে গিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অন্য প্রশ্নও উঠেছে। শ্রমিকেরা জানান, মার্চে বেশ কিছু দিন কাজ করেছিলেন। এপ্রিলের শুরুতে বেতন মিলেছে। কিন্তু এপ্রিলে সারা মাস কাজ না করে মে মাসের শুরুতে বেতন মিলবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। যদিও কৃপালবাবু বলেন, ‘‘উৎপাদন বন্ধ। তা সত্ত্বেও মার্চের বেতন দেওয়া হয়েছে। এপ্রিলের বেতনও দিতে হবে। নিজেদের পকেটের অর্থেই দিতে হবে। তা ছাড়া, কিছু করার নেই।’’