প্রতীকী ছবি।
রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগার ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি, কোভিড-হাসপাতাল বা সেফ হোমে ‘অহেতুক’ আটকে রাখা, রিপোর্ট না মেলায় দেহ পাঁচ-ছ’দিন আটকে রাখা— এমন নানা অভিযোগ তুলে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিল বামফ্রন্ট। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বাম নেতারা জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতীর সঙ্গে কথা বলেন মঙ্গলবার। কোভিড-পরিস্থিতিতে কী ঘাটতি হচ্ছে, কী ভাবে তা মিটিয়ে এগনো সম্ভব, তা নিয়ে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
জেলাশাসক পরে বলেন, ‘‘প্রতিটি অনুচ্ছেদ ধরে বামফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। অনেকগুলি বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে আমি এক মত। প্রতিটি বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে। আগের চেয়ে নমুনা পরীক্ষা বেড়েছে। রিপোর্টও অনেক তাড়াতাড়ি মিলছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে সোমবার পর্যন্ত ৫৩,২৬১টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। তার মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ৫২,৪৬৫টি। সোমবার পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১,৮৮৪ জন। ‘অ্যাক্টিভ’ রোগী রয়েছেন ৪৪৫ জন। মৃতের সংখ্যা ৩৮। সুস্থতার হার ৭৪.৩৬ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ২.০১ শতাংশ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, প্রতিদিনই সুস্থতার হার বাড়ছে।
বামফ্রন্টের ওই দলে থাকা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ পালনের ক্ষেত্রে জেলায় ঘাটতি হচ্ছে। যার ফলে, সামনের সারিতে থাকা করোনা-যোদ্ধারা খুব অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন।’’ বাম নেতাদের আরও অভিযোগ, করোনা-আক্রান্তের পরিজনদের কী করণীয়, সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য দফতর কিছু জানাচ্ছে না। আক্রান্তের বাড়ি বা আশপাশের এলাকা বাঁশ দিয়ে ঘিরতে প্রশাসন যতটা উদ্যোগী, চিকিৎসার ব্যাপারে ততটা উৎসাহী নয়। জীবাণুনাশক ছড়ানোর ক্ষেত্রেও গাফিলতি রয়েছে।
‘হোম আইসোলেশন’ বা সেফ হোমে থাকা আক্রান্তদের উপরে নজরদারি বাড়ানো, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সারি’ ওয়ার্ডে পরিকাঠামোর খামতির অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছে বাম নেতারা তুলে ধরেন। বামফ্রন্টের জেলা চেয়ারম্যান অমল হালদার বলেন, ‘‘জেলাশাসক ধৈর্য ধরে আমাদের কথা শুনেছেন। কোভিড-ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের খামতিগুলি জানিয়েছি। আমরা এটাও মনে করি, ভাল পরিবেশ তৈরি করতে গেলে সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।’’
বামফ্রন্টের তরফে এ দিন অ্যাম্বুল্যান্স-পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রান হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। নেতারা দাবি করেন, জেলা প্রশাসন অ্যাম্বুল্যান্সগুলি নিয়ে একটি ‘পুল’ তৈরি করুক। ‘হেল্পলাইন’ নম্বর চালু করে ন্যায্য মূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স-পরিষেবা দেওয়া দরকার। জেলায় করোনা আক্রান্তদের সরকারি ব্যবস্থার বাইরে কোনও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ শতাংশ শয্যা কোভিড-রোগীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান তাঁর। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা রাখার বিষয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)