প্রতীকী ছবি।
সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। কিন্তু আসানসোল মহকুমার অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জ্বর-সর্দির উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা-পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেরই অভিযোগ, মেলেনি পিপিই (পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট)। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
বিভিন্ন চিকিৎসকেরা জানান, জ্বর ও সর্দির উপসর্গ নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী এলে তাঁদের চিকিৎসা পিপিই পরে করতে হবে, এমন নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহও। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি যা ছিল, তা-ই আছে বলে অভিযোগ। যদিও সামগ্রিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যসচিবের নির্দেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই কিট সংক্রান্ত যা যা পদক্ষেপ করা হয়েছে, আপাতত তা ঠিকই আছে। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
সম্প্রতি বরাকরের পিঠাইকেয়ারি এবং কেলেজোড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের গায়ে পিপিই নেই। দস্তানা আর ‘মাস্ক’ পরেই তাঁরা স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছেন। অথচ, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকজনের একাংশ জানাচ্ছেন, জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে অনেক রোগীই আসছেন। পিপিই না থাকায় রোগীর সংস্পর্শেও আসছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ বিষয়ে ভেঙে কিছু না বললেও বরাকর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আধিকারিক অনির্বাণ রায় ও পিঠাইকেয়ারির চিকিৎসক অমরেশ মাজিরা শুধু বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সবটাই জানেন।’’ একই পরিস্থিতি আসানসোল ইএসআই হাসপাতালেও। এখানে একটি ‘কোয়রান্টিন সেন্টার’ রয়েছে। হাসপাতালের সুপার অতনু ভদ্র বলেন, ‘‘আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কিট আনিয়েছি। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। কিটের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
আসানসোল পুরসভার বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা ‘মাস্ক’ পরেছেন। কিন্তু পিপিই কিট নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘পিপিই কিট নেই বলে রোগী দেখা বন্ধ করা যায় না। উপায় না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি।’’ চিকিৎসকেরা জানান, পুরসভা পুনর্ব্যবহার যোগ্য পিপিই কিট দেওয়ার কথা বলা হলেও এ পর্যন্ত তা হাতে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) দিব্যেন্দু ভগত বলেন, ‘‘যে সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রোগীদের সংস্পর্শে এসে কাজ করছেন তাঁদের পিপিই কিট দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে।’’
তবে পরিস্থিতি অনেকটাই ভাল আসানসোল জেলা হাসপাতালে। এখানে জ্বর, সর্দি, কাশির রোগীদের জন্য পৃথক বহির্বিভাগ করা হয়েছে। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই কিট পরে রোগীদের চিকিৎসা করছেন। হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘এখানে পিপিই কিট সংক্রান্ত কোনও সমস্যা নেই। জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ থাকা রোগীদের নিয়ে যাওয়া-আসা করছেন, এমন অ্যাম্বুল্যান্স চালকদেরও পিপিই কিট দেওয়া হচ্ছে।’’