industrial sector

শিল্পে অক্সিজেনের অভাব, কাজ হারানোর আশঙ্কা

রাজ্যে মেডিক্যাল অক্সিজেন বাজার দখলে রয়েছে মূলত দু’টি সংস্থার দখলে। দু’টি সংস্থাই উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়েছে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৭:১৩
Share:

অক্সিজেনের অভাবে বন্ধ কাজ। সোমবার দুর্গাপুরের একটি কারখানায় তোলা। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে আপাতত শিল্প ক্ষেত্রে কিছু দিনের জন্য অক্সিজেন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অভিযোগ, এর ফলে সমস্যায় পড়তে শুরু করেছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন সংস্থা। অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা না করা হলে কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিল্পদ্যোগীরা।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, রাজ্যে মেডিক্যাল অক্সিজেন বাজার দখলে রয়েছে মূলত দু’টি সংস্থার দখলে। দু’টি সংস্থাই উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়েছে। একটি সংস্থা পরিস্থিতি বিবেচনা করে দুর্গাপুরে আরও একটি কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করেছে। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের চাহিদা যে ভাবে বাড়ছে তাতে ওই দুই সংস্থার পক্ষে তা জোগান দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়। এই দিকটি বিবেচনা করে তাই সরকারি সিদ্ধান্ত মতো শিল্প ক্ষেত্রের অক্সিজেন দিয়েই চিকিৎসার প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে।

দুর্গাপুরের শিল্পদ্যোগীরা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কারখানাগুলিতে অক্সিজেনের চাহিদা মেটে অন্য সংস্থা থেকে অক্সিজেন কিনে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে সব সংস্থা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, তাদের উৎপাদিত অক্সিজেন কাজে লাগছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে। ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরকে কেন্দ্র করে পানাগড় থেকে অণ্ডাল পর্যন্ত প্রায় একশো কারখানা রয়েছে। ফেব্রিকেশন, স্টিল কাস্টিং, পিভিসি পাইপ, সাইকেল রিম, কাগজের তৈরি বিশেষ বোর্ড উৎপাদন-সহ নানা ধরনের কারখানা রয়েছে। হাজারের উপরে কর্মী কাজ করেন এই কারখানাগুলিতে।
প্রায় সব কারখানাতেই অক্সিজেনের দরকার পড়ে।

Advertisement

সংগঠনের সভাপতি সুব্রত লাহা জানিয়েছেন, অক্সিজেন সরবরাহ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের এই কারখানাগুলি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, অক্সিজেনের অভাবে বহু কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কারখানাগুলির কর্তাদের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কর্মীদের বসিয়ে মাইনে দেওয়া, বিদ্যুতের বিল মেটানো, ব্যাঙ্কের সুদ মেটানো, কর্মীদের অন্য সামাজিক পরিষেবা প্রদান প্রভৃতি সম্ভব হবে না। ফলে, চালু কারখানাগুলি রুগ্‌ণ হয়ে পড়বে। দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অনিশ্চিত হয়ে যাবে ভবিষ্যৎ।’’

দুর্গাপুরের আরআইপি শিল্পতালুকের বিভিন্ন কারখানায় দেখা গেল, কার্যত কাজকর্ম সব বন্ধ রয়েছে। চত্বরে পড়ে রয়েছে বড় বড় ইস্পাতের প্লেট, অসম্পূর্ণ নির্মীয়মাণ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। নেই কোনও ঠুং-ঠাং আওয়াজ। চারদিক প্রায় নিস্তব্ধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কারখানার কর্মীরা জানান, এই পরিস্থিতিতে কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফের সামগ্রিক পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকবে না। পথে বসতে হবে আমাদের।’’

‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এখনই বিকল্প ব্যবস্থা দরকার। প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে সেই আর্জি জানিয়েছি আমরা।’’ মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অর্ঘ্যপ্রসূন কাজি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসা ক্ষেত্রে অক্সিজেন ব্যবহারকেই অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। তবে শিল্পদ্যোগীদের আর্জি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement