প্রতীকী ছবি।
করোনো আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের এক কর্মাধ্যক্ষের। নারায়ণ হাজরা চৌধুরী নামে ওই কর্মাধ্যক্ষ বর্ধমানের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
করোনায় মৃত্যু নিয়ে চিন্তায় পড়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, তথ্য-বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকা আক্রান্তদের অনেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে তাঁদের নিয়ে আসতে হচ্ছে বর্ধমানের কোভিড হাসপাতালে। দু’-তিন দিনের মাথায় মৃত্যু হচ্ছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। উৎসবের মরসুমে করোনায় মৃত্যুর হার চিন্তায় রেখেছে স্বাস্থ্য দফতরকে। এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে থাকা রোগীরা যাতে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণে থাকেন, সে জন্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন।
পূর্ব বর্ধমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও একশো পার হয়ে গিয়েছে। উৎসবের মরসুম শুরুর আগে জেলায় মৃত্যুর হার ছিল ১.৩১ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে সেই হার বেড়ে দেড় শতাংশ ছুঁয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের দাবি, এই সময়ে করোনার নমুনা সংগ্রহেও ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় শিবির করেও লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। আবার আরটি-পিসিআর যন্ত্রে নমুনা পরীক্ষার ফল সময়মতো মেলেনি। ওই সব রিপোর্ট ও নমুনা পরীক্ষা শুরু হলে, আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়বে। এখন জেলায় ৭৯.৭২ শতাংশ করোনা-আক্রান্ত বাড়িতেই রয়েছেন। আক্রান্তের বাড়ি ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা বলে আলাদা করে চিহ্নিত হচ্ছে না। তাই কোনও ব্যারিকেড থাকছে না। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক মেলামেশা চলছে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ-কর্তাদের। মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ‘হোম আইসোলেশন’-এ থাকা রোগীরাই এখন উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অনেকের দাবি, উপসর্গহীন রোগীরা বাড়িতে থাকলেও হঠাৎ উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছেন পরিজনেরা। ফলে, সময়ে চিকিৎসায় খামতি থেকে যাচ্ছে। সে জন্যই তিন-চার দিন পরে কোভিড হাসপাতালে কোনও কোনও রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। আবার অনেক সময়ে চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই, এমন নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েও বিপদ বাড়াচ্ছেন পরিজনেরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, গোড়ার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন না থাকলেও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। সকলে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইলে শয্যা দেওয়া সম্ভব নয়, তাই ‘হোম আইসোলেশন’-এ রাখায় জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ হলে বা বাড়িতে রাখার মতো পরিকাঠামো না থাকলে ঘরে রেখে দিতে হবে, এ কথা বলা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে আইএমএ-র সাহায্য নিতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আইএমএ-র বর্ধমান সদরের সম্পাদক গণেশচন্দ্র গাইন বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কী ভাবে কাজ করব, তার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে।’’ ঠিক হয়েছে, প্রথমে আইএমএ কর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাঁরা পাড়ার, পুর-স্বাস্থ্য দফতর ও পারিবারিক চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এ কাজে পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকেও যুক্ত করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) তথা হুগলির আইএমএ-র সম্পাদক সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘যৌথ ভাবে কাজ করা হবে। আক্রান্তদের বাড়িতে ফোন করে চিকিৎসা সংক্রান্ত কী-কী সহায়তা প্রয়োজন, জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর ফলে, ঠিক সময়ে বাড়িতে থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে।’’
কাটোয়া ও কালনা মহকুমার আক্রান্ত ও তাঁদের পরিজনদের অনেকের ক্ষোভ, তাঁদের এলাকায় করোনা চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। আক্রান্তকে ৬০-৭০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমানে নিয়ে যেতে হয়। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।
জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯