cooking gas

Cooking Gas Price: পড়ে রয়েছে আভেন, জ্বলছে উনুন

বর্ধমানের শক্তিগড়ের গ্যাস-ডিলার রাজীব ভৌমিক বলেন, “সাধারণ মানুষও হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস কিনতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২২ ০৮:০৪
Share:

ভাতারের বুল্টি সর্দারের বাড়িতে। শনিবার। ছবি: সুদিন মণ্ডল

চিত্র ১) গ্যাস আভেনের উপরে বসানো বালতি। গ্যাস সিলিন্ডারের মাথায় কাপড় ভর্তি ঝুড়ি! ভাতারের রেজিস্ট্রি অফিসের কাছে ওই বাড়ির বধূ বুল্টি সর্দার বলেন, “যে দিন থেকে গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু ৮৫০ টাকা হয়েছে, তখন থেকেই গ্যাসে রান্নার পাট চুকে গিয়েছে।’’

Advertisement

চিত্র ২) বাড়ির এক কোণে পড়ে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার। মাটির উনুনেই চলছে রান্না। মেমারির সুলতানপুরের নাফিসা বিবি বলেন, “মাঝে মধ্যে চা বা দুধ গরম করার জন্য গ্যাস ব্যবহার করি। বাকি সময় কাঠের উনুনেই রান্না করি।’’

চিত্র ৩) বাড়িতে রয়েছে ঝকঝকে আভেন। লাল টুকটুকে সিলিন্ডার। তা সত্ত্বেও উনুনে ধান গাছের গোড়া, তুষ, কাঠ ঠেলে রান্না করছেন গলসির ইড়কোনা গ্রামের জবা রুইদাস। তাঁর দাবি, “বিনামূল্যে সংযোগ পেলেও, দাম বাড়ায় রান্নার গ্যাস কেনার ক্ষমতা নেই। সে জন্য কষ্ট করেই রান্না করছি।’’

Advertisement

তিন জনই দারিদ্রসীমার নীচে বাস করেন। পেয়েছিলেন ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ থেকে বিনামূল্যে গ্যাসের সংযোগ। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে তাঁরা আতান্তরে পড়েছেন। তাঁদের কথায়, “আশীর্বাদ হিসেবে উজ্জ্বলার সংযোগ বাড়িতে এসেছিল। এখন সেটাই যেন অভিশাপ হয়ে উঠছে। না পারছি রাখতে, না পারছি ফেলতে!”

গ্যাসের ডিলারদের একাংশের দাবি, পূর্ব বর্ধমানে ২০১৯ সালের এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সর্বাধিক সংযোগ দেওয়া হয়। সিলিন্ডার ‘রিফিল’-এর পরিমাণও ভাল ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের পুজোর পর থেকে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়তে থাকায় ‘রিফিল’-এর সংখ্যা কমতে থাকে।

উজ্জ্বলা গ্যাস সরবরাহকারী নোডাল সংস্থার দাবি, এপ্রিল ও মে মাসে পর পর দু’বার ৫০ টাকা করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য এক ধাক্কায় আট শতাংশ ‘রিফিল’ করানো কমে গিয়েছে। এখন পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৮ শতাংশ সংযোগকারী ‘রিফিল’ করাচ্ছেন। জেলায় পাঁচ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৯ জন গ্রাহক উজ্জ্বলার সংযোগ নিয়েছেন।

পূর্ব বর্ধমান জেলার উজ্জ্বলা গ্যাস-সরবরাহকারী ‘নোডাল’ সংস্থার সেলস ম্যানেজার তমোঘ্ন ত্রিপাঠী বলেন, “দামবৃদ্ধির সঙ্গে এই সময় বিকল্প জ্বালানি সহজলভ্য থাকায় অনেক সংযোগকারী পুরনো পদ্ধতিতেই রান্না করছেন।’’

আবার উজ্জ্বলা গ্যাস সিলিন্ডারের সরবরাহে সমস্যা থাকায় তাঁদের মতো অনেকেই সাধারণ রান্নার গ্যাসের সংযোগ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বর্ধমান শহরের পারবীরহাটার নমিতা ঘোষ, বীরহাটার রানি বর্গক্ষত্রিয়রা। তাঁদের দাবি, “উজ্জ্বলা আর সাধারণ গ্যাস সিলিন্ডারের দামের পার্থক্য নেই। তখন শুধু উজ্জ্বলার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকব কেন? সাধারণ গ্যাসের সংযোগ নিয়েছি।“ তবে সবার সে সামর্থ্য নেই।

মেমারির আসমাতারা বিবি, গলসির ভারিচা গ্রামের ইসমাতারা বেগম ও ভাতারের কুলচুন্ডা গ্রামের দুলাল রাজমল্লদের দাবি, “রান্নার গ্যাস কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। দিনমজুরের কাজ সেরে বাড়ি আসার সময় কাঠ-ধানের তুষ জোগাড় করে নিয়ে আসি। তাতেই রান্না করতে হয়। ধোঁয়ায় কষ্ট হলেও আমাদের কিছু করার নেই।’’

বর্ধমানের শক্তিগড়ের গ্যাস-ডিলার রাজীব ভৌমিক বলেন, “সাধারণ মানুষও হাজার টাকা দিয়ে গ্যাস কিনতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে, সেখানে প্রান্তিক মানুষরা কী ভাবে কিনবেন? অনেক পরিবার প্রথম বার বিনামূল্যে সংযোগ পাওয়ার পরে আর গ্যাস কিনছেন না।’’ গ্যাস সরবরাহ সংস্থাগুলির দাবী, পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় জ্বালানি হিসেবে কয়লার প্রাচুর্য বেশি। তাই কম খরচের জ্বালানি হিসেবে কয়লাই ব্যবহার করছেন অনেকে। কাঠ, ধানের তুষ-ও ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে, দেশের প্রত্যেকের ঘরে ‘এলপিজি’ সংযোগের যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা ধাক্কা খাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement