—প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন আগে সই জাল করে স্থায়ী আমানত ভেঙে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর চিঠি দেওয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তরফে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মীর নামে এফআইআর করা হয়। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় জানতে পারে, এই ঘটনাই প্রথম নয়। আগেও একই কায়দায় স্থায়ী আমানত ভেঙে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার জন্য অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সেই ব্যাঙ্ক সই খতিয়ে না দেখে প্রায় সওয়া এক কোটি টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েও দেয়। কী ভাবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অমান্য করে স্থায়ী আমানত ভেঙে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তুলে ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই দুর্নীতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের কেউ জড়িয়ে আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী বলেন, “একটা দুর্নীতি হয়েছে। ব্যাঙ্ক কী ভাবে টাকা দিল সেটাই বুঝতে পারছি না। আমরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা টাকা স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা আছে। ২০২২ সালে তিনটি স্তরে কল্যাণীর একটি বেসরকারি এজেন্সির অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকার মতো পাঠানো হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে টাকার অঙ্ক কিছুটা কম বা বেশিও হতে পারে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগ মনে করছে।
প্রায় দু’বছর আগের একটি ‘খরচ’ হঠাৎ করে কী ভাবে চোখে পড়ল? বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, গত সপ্তাহে স্থায়ী আমানত ভেঙে একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লেটার হেড’-এ দেওয়া চিঠি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বড় বাজার শাখায় জমা পড়ে। সেখানে একটি এজেন্সির অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। ব্যাঙ্কের কর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী ও ফিনান্স অফিসার (এফও) সৌগত চক্রবর্তীর সই জাল করে ব্যাঙ্কে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপ রেই ওই শাখার সিনিয়র ম্যানেজার বর্ধমান থানায় অর্থ দফতরের দুই কর্মীর নামে এফআইআর করেন। চিঠির প্রতিলিপি পাওয়ার পরেই অভিযুক্তদের শো-কজ় করা হয়। রেজিস্ট্রারের নেতৃত্বে পাঁচ জনের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এর পরেই অর্থ বিভাগ ওই এজেন্সির অ্যাকাউন্টে আগে কোনও টাকা পাঠিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু করে। দেখা যায়, ২০২২ সালে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তিনটে পর্যায়ে রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসারের সই জাল করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে ওই এজেন্সির অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠানো হয়েছে। এর পরেই মঙ্গলবার দুপুরে অর্থ দফতরের আধিকারিকরা সরেজমিন সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে কী ভাবে স্থায়ী আমানত ভেঙে ওই টাকা দেওয়া হল জানতে চান। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “আরবিআইয়ের নির্দেশিকা অনুযায়ী স্থায়ী আমানত নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভাঙাতে গেলে ভাল করে খতিয়ে দেখতেই হবে। তা ছাড়া কোনও জরুরি প্রয়োজনে ভাঙাতে হলে অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে নয়, গ্রাহকের অ্যাকাউন্টেই সেই টাকা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি। ব্যাঙ্কের ভূমিকাও ইতিবাচক নয়।”