এই ফলক ঢাকা নিয়ে বাধে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ফলক ঢেকে দেওয়ার ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হল আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। মঙ্গলবার সকালে এই বিষয়টি নজরে পড়তেই ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল। বিতর্ক তীব্র হতেই ফলক থেকে ঢাকা খুলে ফেলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদিও দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তাঁদের কোনও হাত নেই। যা করার নির্বাচন কমিশন করেছে।
আজ, বুধবার আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা। উপস্থিত থাকার কথা আচার্য তথা রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর এই অনুষ্ঠান নিয়ম বহির্ভূত জানিয়ে চিঠি দেয়। এ বার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বসানো মুখ্যমন্ত্রীর নামাঙ্কিত পুরনো একটি ফলক ঢেকে দেওয়ায় ফের বিতর্ক শুরু হল। জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নতুন ভবনের উদ্বোধনের সময়ে এই ফলকটি বসানো হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে মমতা উপস্থিতও ছিলেন।
ফলকটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল। তৃণমূলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সহ-সভাপতি মনিশঙ্কর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘সিভি আনন্দ বোসের মুখ্যমন্ত্রীর নামে এত কেন নিরানন্দ, বুঝতে পারি না। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’’ সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক বীরু রজকের বক্তব্য, ‘‘খুব অন্যায় হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আমাদের আপত্তি জানিয়েছি।’’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘এটা রাজ্যবাসীর অপমান। আমরা বিক্ষোভ দেখাব।’’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের আর্থিক আনুকূল্যে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও সম্পর্ক নেই। সম্ভবত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে নির্বাচন কমিশন এমনটা করেছে। আমাদের কোনও হাত নেই।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক চন্দন কোনারও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের তরফে এটি ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। পরে তা আবার খুলে নেওয়া হয়েছে।’’
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর নামাঙ্কিত ফলক ঢাকা হয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বারোদ্ঘাটন ও ভিত্তিপ্রস্তর সংক্রান্ত ফলক ঢাকা হবে কি না, আদর্শ আচরণ বিধিতে তার কোনও নির্দেশিকা নেই। তাই মঙ্গলবার সকালে ফলকের আবরণ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শেষবেলার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে শেষ বার সমাবর্তন আয়োজন হয়েছিল। উচ্চ শিক্ষা দফতরের আপত্তি সত্ত্বেও সমাবর্তন আয়োজন হচ্ছে কেন, সে প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু দাবি করেন, সমাবর্তন আয়োজনের জন্য পড়ুয়াদের তরফে রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। আচার্যের নির্দেশ পালন ও পড়ুয়াদের আবেগকে সম্মান দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।