প্রতীকী ছবি।
উন্মুক্ত শৌচমুক্তি প্রকল্প (ওডিএফ) নিয়ে জেলা থেকে পাঠানো ছ’টি পুরসভার রিপোর্টে ‘ফাঁক’ রয়েছে, বলে মনে করছে রাজ্য পুর ও উন্নয়ন নিগম দফতর। গত দু’মাসে ‘ওডিএফ’ নিয়ে জেলা থেকে তিন বার রিপোর্ট পাঠাতে হয়েছে। শৌচাগার তৈরি নিয়ে পুরসভাগুলির মনোভাব দেখে ভোটের মুখে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। তাদের দাবি, শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদেরও শৌচকর্মের জন্য নদীর ধারে যেতে হয়, এর দায় শাসক দলকেই নিতে হবে। যদিও তৃণমূলের দাবি, পূর্ব বর্ধমান জেলার সব পুরসভাতেই উন্মুক্ত শৌচমুক্তি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব পুরসভায় শৌচাগার তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নভেম্বর মাসের গোড়া থেকে নিয়মিত ভাবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শৌচাগার তৈরিতে পুরসভাগুলির অবস্থান নিয়ে রিপোর্ট নেওয়া হয়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, কাটোয়া ও কালনাকে ‘উন্মুক্ত শৌচ মুক্ত’ বা ‘ওডিএফ’ বলে কেন্দ্র সরকার রিপোর্ট দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই দু’টি পুরসভাতেই শৌচাগার তৈরি সম্পূর্ণ হয়নি বলে জানা যায়।
সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, কালনা পুরসভা বাকি থাকা ৪৬২টি শৌচাগার তৈরি শেষ করেছে। আর কাটোয়া পুরসভার ১,২৩২টি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, এখনও কিছু শৌচাগার তৈরি করা বাকি। বর্ধমান পুরসভা নভেম্বর থেকেই ‘লক্ষ্যপূরণ’ (৭,৬৬৬টি) হয়ে গিয়েছে দাবি করলেও রাজ্য সরকার সেটা মানতে পারছে না। সে জন্য তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ছ’টি পুরসভায় ১৫,০৩১টি শৌচাগার তৈরির করার কথা। ফেব্রুয়ারির গোড়া পর্যন্ত ৩২০টি শৌচাগার গড়া বাকি ছিল বলে রিপোর্ট জমা পড়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলেও জানানো হয়। তার পর থেকে ডিসেম্বরে তিন বার ও জানুয়ারিতে এক বার রিপোর্ট চেয়ে রাঠায় পুর ও নগরন্নোয়ন দফতর। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “দু’-একটা বাকি থাকতে পারে। তবে ৯৯ শতাংশের বেশি শৌচাগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। রিপোর্টও পাঠানো হয়ে গিয়েছে।’’ পুরসভাগুলিরও দাবি, শৌচালয়ের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। যে রিপোর্ট দেখানো হচ্ছে তা ঠিক নয়।
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের কথায়, “জেলার সব পুরসভাই তৃণমূলের। রাজ্য প্রশাসনই তাদের পুরসভার তথ্য মানতে চাইছে না। দাবি আর বাস্তবের মধ্যে ফাঁক পাচ্ছে। কী রকম উন্নয়ন চলছে বোঝাই যাচ্ছে!’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শৌচাগার তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া মানে শহরের নিচুতলায় উন্নয়নের ছিঁটেফোঁটা লাগেনি। পুরভোটের আগে এ নিয়ে তো সরব হবই।’’
তৃণমূলের জেলার সাধারণ সম্পাদক খোকন দাসের পাল্টা দাবি, “২০২০-তে এসেও শৌচাগার নিয়ে তৃণমূল সরকারকে ভাবতে হচ্ছে! এতেই বোঝা যাচ্ছে বামফ্রন্টের উন্নয়নের খাতায় শুধুই গোল্লা রয়েছে। সেখানে আমরা উন্মুক্ত শৌচ মুক্তি করছি।’’