জমায়েত করে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত অফিসের পিছন থেকে উদ্ধার হল রবিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ এক বিজেপি কর্মীর দেহ। সোমবার সকালে দুর্গাপুরের ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার প্রতাপপুর পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, স্বরূপ সৌ (৩৩) নামে ওই যুবকের বাড়ি দুর্গাপুরের পারুলিয়ায়।
বিজেপির অভিযোগ, তাদের ওই কর্মীকে তৃণমূলের লোকেরা খুন করেছে। উপযুক্ত তদন্তের দাবিতে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখায় তারা। আজ, মঙ্গলবার থানা ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের বলি হলেন আরও এক জন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই সরকার যত দিন থাকবে, হিংসা চলবে। এই সরকারের সঙ্গে সঙ্গে হিংসা বিদায় হবে। সে লড়াই লড়ছি আমরা।’’ তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের মন্তব্য, ‘‘খুন হলে, তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব অবশ্যই পুলিশের। কিন্তু ভোট আসন্ন, তাই যে কোনও মৃত্যুকে বিজেপি রাজনীতির বৃত্তে নিয়ে আসতে চাইছে। তবে রাজ্যের মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতায় বিচার করে ওদের প্রত্যাখ্যান করবেন।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিলেন বিজেপি কর্মী স্বরূপবাবু। নানা জায়গায় খোঁজ করেও তাঁর হদিস পাননি পরিবারের লোকেরা। তবে থানায় কোনও নিখোঁজ-ডায়েরি করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেন থানায় জানানো হল না? স্বরূপের দাদা অরূপ সৌ জানান, স্বরূপবাবু বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর দাবি, ‘‘ভাই প্রায়ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। দীর্ঘক্ষণ পরে ফিরেও আসত।’’ রবিবারও তাই হবে ভেবেছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। তাই তাঁরা থানায় জানাননি। তবে সোমবার পঞ্চায়েত অফিসের পিছনের দিকে ঝোপের জঙ্গল থেকে স্বরূপবাবুর দেহ উদ্ধার হয়। দেহটি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসতেই হাজির হন বিজেপি জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুই ও দলের কর্মী-সমর্থকেরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। মহকুমা হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে দেহটি ময়না-তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে। পরে আসানসোল থেকে চিকিৎসক এনে দুর্গাপুরে দেহের ময়না-তদন্ত করার ব্যবস্থা করায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিজেপির তরফে মুখে খুনের অভিযোগ করা হলেও লিখিত ভাবে জানানো হয়নি বলে দাবি পুলিশের। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘এ দিন রাত পর্যন্ত ওই যুবকের পরিবার কিংবা অন্য কারও তরফে লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের দেহের কোথাও ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা করা হয়েছে। এমন নির্জন জায়গায় কেনই বা তিনি এসেছিলেন এবং পরনে যে ধরনের শীতবস্ত্র পাওয়া গিয়েছে তা এখনকার আবহাওয়ায় কতটা যথাযথ তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।