প্রতীকী ছবি।
কখনওসখনও পেতেন বাড়ি যাওয়ার সুযোগ। সারাদিন মদের দোকানে কাজ করে রাতগুলি সেখানেই মাথা গুঁজে কাটিয়ে দিতেন। এ ভাবেই কেউ পার করে দিয়েছিলেন জীবনের দশটা বছর। কেউ তার তিন গুণ। বৃহস্পতিবার রাতে চেলাকাঠের বেপরোয়া মারে পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার শিবপুরে মৃত্যু হয়েছে যে চার জনের, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাঁকুড়ার ওই তিন জন—ছাতনার ধবনের অম্বুজ মণ্ডল, গঙ্গাজলঘাটির কাপিষ্টার সুবোধ বাউড়ি ও সোনামুখীর পাথরহাটির প্রশান্ত সাহা। সংসারের হাল ধরা ছিল তাঁদেরই হাতে। রাতারাতি দিশাহীন হয়ে পড়েছে পরিবারগুলি।
বছর বিয়াল্লিশের অম্বুজবাবুর বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শিবু পঞ্চম শ্রেণি ও মেয়ে সাথী অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। পরিবার সূত্রে খবর, ওই মদের দোকানে প্রায় বারো বছর কাজ করতেন অম্বুজবাবু। তাঁর স্ত্রী কবিতাদেবী কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। দাদা উত্তম মণ্ডল বলেন, ‘‘খবর শুনে, আমরা হতবাক। আমরা খুবই গরিব। আমি একটা মুদির দোকানে কাজ করি। দাদার পরিবার কী ভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে, বুঝে উঠতে পারছি না।’’ অম্বুজবাবুর পরিবারের সঙ্গে শুক্রবার জামুড়িয়ায় গিয়েছেন ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের স্বপন মণ্ডল।
সুবোধবাবুর বয়স হয়েছিল ষাট বছর। স্ত্রী পাখিদেবী ও ছেলে গোরাচাঁদ দিনমজুরি করেন। পরিবার সূত্রে খবর, প্রায় দশ বছর তিনি ওই মদের দোকানে কাজ করছিলেন। পাখিদেবী বলেন, ‘‘স্বামীর রোজগারই পরিবারের মূল ভরসা ছিল। আমরা এ বার কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না! খুনির শাস্তি চাই।’’ দুপুরে সুবোধবাবুর পরিবার জামুড়িয়া রওনা দেয়। কাপিষ্টা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের তপনজ্যোতি দুবে বলেন, ‘‘পরিবারটি খুবই দরিদ্র। আমরা যত দূর পারি, সাহায্য করব।’’
সোনামুখীর ধূলাই পঞ্চায়েতের পশ্চিম পাথরহাটি গ্রামের প্রৌঢ় প্রশান্ত সাহার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক তলা পাকা বাড়িতে বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী যোগমায়া ও ছেলে অরূপ। অল্প জমি রয়েছে। অরূপ তাতে চাষ করেন। পরিবারের কেউ কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। পড়শিরা জানান, অরূপের বিয়ের চেষ্টা চলছে। বুধবার মেয়ের বাড়ি থেকে দেখতে আসার কথা ছিল। সে জন্য বাড়ি এসেছিলেন প্রশান্তবাবু। কিন্তু তারা না আসায় আবার ফিরে যান।
কুলটির বৃদ্ধ কালী ভুঁইয়ার দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে সওদাগর ভুঁইয়া বলেন, “মন খারপ থাকলেই বাবা বোনেদের বাড়ি চলে যেতেন।’’ বৃহস্পতিবার সকালে জামুড়িয়ার শিবপুরে গ্রামে ছোট মেয়ে আশা ভুঁইয়ার শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। আততায়ীর সামনে পড়ে গিয়েছিলেন শৌচে বেরনো কালীবাবু। চেলাকাঠের বাড়িতে খুন হয়েছেন তিনিও। আশা বলেন, ‘‘আমার বাড়িতে এসেই এমন ঘটনা ঘটবে, ভাবতে পারিনি!’’