পূর্বস্থলীর ঝাউডাঙায় নদীর পাড় ভাঙা। —নিজস্ব চিত্র।
জলাধারের ছাড়া জলে ও দিন কয়েক টানা বৃষ্টির জেরে অজয় ও ভাগীরথীতে জলস্তর বেড়েছে। ভাগীরথীর জলস্তর পূর্বস্থলীর কোনও কোনও জায়গায় উপচে পৌঁছে গিয়েছে লাগোয়া চাষের জমিতেও। অজয়ের জলস্তর তুলনায় কিছুটা কম। জল প্রাথমিক বিপদসীমার নীচে রয়েছে। তবে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা ফসল বাঁচানো নিয়ে চিন্তায়। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের ঝাউডাঙায় ভাগীরথীর জল উপচে পৌঁছেছে চাষের জমিতে। যদিও বুধবার কালনা মহকুমা প্রশাসন জানায়, দুর্যোগ নিয়ে পাঁচ ব্লকই সতর্ক রয়েছে। ভাগীরথীর জল ৭.৬ মিটার ছুঁলে বিপদসীমার উপরে বইতে শুরু করে। মঙ্গলবার থেকে জল কিছুটা বেড়েছে। তবে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কালনায় ভাগীরথীর জলস্তর ছিল ৫.৪৩ মিটার। কিন্তু কিছুটা নিচু এলাকা হওয়ায় ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় জল ঢুকেছে। এই এলাকায় নদিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা ব্যবহার বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাসিন্দাদের দাবি, দুর্যোগ চলায় এলাকায় ভাঙন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মনমোহনপুর, কিশোরীগঞ্জ, কালনা ১ ব্লকের কালীনগর-সহ বেশ কিছু গ্রামে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। ব্লক প্রশাসনের তরফে গ্রামগুলির পরিস্থিতি খোঁজ নেওয়া হয় এ দিন। বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি। সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের কাঞ্চনতলার বাসিন্দা অনন্ত মুন্ডারি জানান, তাঁর মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। মহকুমা দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এখনও দুশিন্তার পরিস্থিতি নেই। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। কিছু এলাকায় নজরদারি চলছে।’’ কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ জানান, বৃষ্টির ঘাটতি ছিল অনেকটাই। কিছুটা পূরণ হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ফসলের ক্ষতি হয়েছে, এমন রিপোর্ট আসেনি। বুধবার কাটোয়া শহরের শ্মশানের পিছনে কাশীগঞ্জঘাট এলাকায় নদিয়ার নয়াচর যাওয়ার রাস্তার একেবারে পাশ দিয়ে ভাগীরথী বইতে দেখা যায়। শহরের জামাইপাড়ায় বসতির কাছে চলে এসেছে নদী। ফেরিঘাটগুলিতে পুরসভার তরফে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। অজয়ের জল অনেকটা বাড়লেও, প্রাথমিক বিপদসীমার নীচেই রয়েছে। তবে জল আচমকা বিপদসীমার কাছাকাছি এসে গেলে যাতে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় যেতে পারেন বাসিন্দারা, সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে বলে দাবি প্রশাসনের। দুই নদীরই জল বেড়ে যাওয়ায় পাড়ের ফসল নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘুটকিয়াপাড়ার বাসিন্দা কেষ্ট দাস বলেন, ‘‘গত তিন দিন ধরে অজয়ের জল বেড়েছে। বাড়িতে জল ঢোকার মতো পরিস্থিতি না হলেও, জমির ফসল নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’ অভিজিৎ রায় নামে আর এক বাসিন্দা বুধবার বলেন, “ভাগীরথীর জল হু-হু করে বাড়ছে। নদীর পাড়ের কাছে বাস করি বলে কিছুটা আতঙ্ক আছেই। তবে এ দিন সকাল থেকে খুব ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তিতে রয়েছি।’’ নদী চওড়া হয়ে যাওয়ায় পারাপারে সময় বেশি লাগছে, আতঙ্কও হচ্ছে বলে যাত্রীদের দাবি।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, “জলাধারের ছাড়া জলে ও বৃষ্টির জন্য দুই নদীতে জল বাড়লেও, আপাতত ভয়ের কিছু নেই। জলস্তর প্রাথমিক বিপদসীমার নীচেই রয়েছে। আমরা পরিস্থিতির দিকে
নজর রাখছি।’’