হিমঘরে আলুর বস্তা। নিজস্ব চিত্র।
হিমঘরে আলু রাখার সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে সোমবার। দু’তিন দিন পরেও হিমঘর ফাঁকা না হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে রাজ্য সরকার। এর মধ্যেই ‘ওয়েস্টবেঙ্গল কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন’ আলু বার করার জন্য আরও ১৫ দিন সময় চেয়ে খাদ্য ভবনে চিঠি দিয়েছে। যদিও সরকার সময়সীমা বাড়াতে রাজি নয়। এই পরিস্থিতিতে আজ, বুধবার কলকাতায় বৈঠকে বসার কথা আলু ব্যবসায়ীদের।
হিমঘর মালিকেরা জানান, ২৭ নভেম্বর রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিয়ে সোমবারের মধ্যে আলু বার করতে বলে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২ কোটি ৩৩ লক্ষ বস্তা (প্রতি বস্তা ৫০ কেজি) আলু মজুত হয়েছিল। মঙ্গলবার পর্যন্ত তার প্রায় ১০% হিমঘরে মজুত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেলার আলু ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, রবিবার থেকে পাইকারি বাজারে আলুর দাম বস্তা প্রতি ১০০ টাকা করে কমছে। খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘সময়সীমা বাড়ানো সম্ভব নয়। কড়া হুঁশিয়ারি দিতেই পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।’’ কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের অনেকের ধারণা, আলুর বাজারে চাহিদা-জোগানের ফারাক রাখার জন্য হিমঘর থেকে কম পরিমাণে আলু বার করা হচ্ছিল, এখন তা বোঝা যাচ্ছে। সে কারণেই এত দিন ধরে রাজ্যে ক্রেতাদের প্রায় ৪০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে হয়েছে।
রাজ্যের হিমঘর মালিক সংগঠনের সম্পাদক পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘এখন হিমঘরগুলিতে কর্মী কম থাকে। তা ছাড়া, এত কম সময়ের মধ্যে রাতারাতি আলুর বস্তা হিমঘরের বাইরে বার করে দেওয়া সম্ভব নয়। সর্বশক্তি কাজে লাগিয়েও আলু বার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বিগত বছরগুলির মতো এ বারও বাড়তি ১৫ দিন সময় চাওয়া হয়েছে।’’ রাজ্যে প্রতি মাসে পাঁচ লক্ষ টন আলু লাগে। ভিন্ রাজ্যে যায় প্রায় এক লক্ষ টন। রাজ্য আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, পাঁচ লক্ষ টন আলু হিমঘরে রয়েছে। নতুন আলু উঠতে দেরি আছে। অন্তর্বর্তী সময়ে রাজ্যের মানুষের জন্য ওই আলু প্রয়োজন। তাঁর দাবি, “এখন জোর করে আলু বার করে দিলে কিছু দিন পরেই জোগানের অভাব হবে।’’ আজ, বুধবার রাজ্য স্তরে আলু ব্যবসায়ী সংগঠন জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক ডেকেছে। তারাও বাড়তি সময় চেয়ে সরকারকে চিঠি দিতে পারেন বলে সংগঠন সূত্রের দাবি।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির পূর্ব বর্ধমানের সভাপতি সাগর সাহা জানান, এক-একটি হিমঘরের বাইরের আচ্ছাদনে পাঁচ-সাত হাজার বস্তা আলু রাখা যায়। সেখানে অনেক হিমঘরে ৩০-৪০ হাজার বস্তা আলু রয়েছে। ওই সব হিমঘর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে আলু বার করতে সমস্যা হবে। তবে যেখানে দু’তিন হাজার বস্তা আলু রয়েছে, সেই সব হিমঘর থেকে দু’তিন দিনের মধ্যে আলু বেরিয়ে যাবে বলে তাঁদের দাবি।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘হিমঘর থেকে আলু বার করার জন্য আরও দু’তিন দিন আমরা দেখব। তার পরে, আইনানুগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’’