খুলে দেওয়া হল মেমারি হিমঘর। — ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে সাত দিনের মধ্যে মেমারির রসুলপুরের হিমঘরে নষ্ট হওয়া আলুর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও আইনি জটিলতায় সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পাচ্ছিলেন না চাষিরা। আলুর মরসুম শুরু হয়ে গেলেও হিমঘর খুলতে পারছিলেন না কর্তৃপক্ষও। অবশেষে ন’মাস পরে, মার্চের প্রথম সপ্তাহে পুলিশের হস্তক্ষেপে চাষি ও হিমঘর কর্তৃপক্ষের মধ্যে আপস-মীমাংসা হয়। রসুলপুরের ওই হিমঘরে ফের আলু রাখার কাজও শুরু হয়েছে।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চাষি ও হিমঘর কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সমস্যা অনেকটা মিটিয়ে নিয়েছে। হিমঘর খুলে যাওয়ায় চাষিরা আলু রাখতে পারছেন।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মে হিমঘরের তিন নম্বর চেম্বারের গ্যাস লিক করে জ্যোতি জাতের আলু নষ্ট হয়। হিসেব করে দেখা যায়, ১,৮৮৯ জন চাষির এক লক্ষ ১৫ হাজার ৬১৫ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) আলু নষ্ট হয়েছে। সেই সময় প্রতি বস্তা গড় (ভাল, মাঝারি, খারাপ মিলিয়ে) আলুর দাম ছিল ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে জেলা স্তরে প্রথম বৈঠক হয়। হিমঘর মালিক সুপ্রকাশ ভট্টরের উপস্থিতিতে প্রতি বস্তা পিছু ৯০০ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন তাঁরা। বিচারক সংশ্লিষ্ট দফতরকে (কৃষি বিপণন) ক্ষতিপূরণের অঙ্ক জানাতে বলেন। ওই দফতর প্রতি বস্তায় ৮৯০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ফের হাইকোর্টে মামলা করেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ। বিচারকের অন্তবর্তী রায়ে চাষিরা বস্তা পিছু ২৫৫ টাকা করে পান। মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
এ দিকে, ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষিদের আন্দোলন চলছিল। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে জেলাশাসক দফতর পর্যন্ত ‘ঘেরাও’ করেন তাঁরা। হিমঘরে মজুত আলু কর্তৃপক্ষ যাতে বার করতে না পারেন, সে দিকেও নজরদারি চলছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে হিমঘরে বাঁশের ব্যারিকেড করে আটকে দেন চাষিরা। প্রচুর পরিমানে আলু মজুত হয়ে রয়েছে, আবার নতুন আলু হিমঘরজাত করা যাবে না বুঝতে পেরে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। পুলিশের হস্তক্ষেপে মীমাংসা করতে রাজি হন তাঁরা।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে মেমারির কেন্নায় চাষি ও হিমঘর কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে হাজির ছিলেন এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) ও মেমারির ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়। ঠিক হয়, আইন ও মামলা যেমন চলছে, চলবে। হাইকোর্ট রায় দেওয়ার পরে ক্ষতিপূরণের বিস্তারিত বিষয়টি দেখা হবে। তার আগে, চাষিদের স্বার্থে ও হিমঘর চালানোর জন্য কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের একাংশ দিতে রাজি হন। ঠিক হয়, এ মাসেই বস্তা পিছু ১০০ টাকা ও সেপ্টেম্বরে বস্তা পিছু আরও ৭০ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেবে হিমঘর কর্তৃপক্ষ। সাদা কাগজে চুক্তিতে দু’পক্ষ সই করেন।
চাষিদের তরফে বৈঠকে হাজির থাকা সদানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘‘হিমঘর চালু রাখার জন্য মূলত চাষিদের স্বার্থে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে আপস-মীমাংসায় দু’টি পর্যায়ে আরও ১৭০ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বাকি আদালতের রায়ের উপরে নির্ভর করছে।’’ হিমঘরের মালিক সুপ্রকাশ ভট্টর বলেন, ‘‘আপাতত হিমঘর খোলার ক্ষেত্রে বাধা রইল না।’’