গৌরান্ডিতে। নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসায় গাফিলতিতে শনিবার বারাবনির লালগঞ্জের শুক্লা মণ্ডল (১৬) নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগে রবিবার বারাবনির গৌরান্ডিতে এক ‘হাতুড়ে চিকিৎসকের’ ক্লিনিক ও বাড়িতে ‘ভাঙচুর’ চালালেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তবে চিকিৎসায় গাফিলতি, ভাঙচুরের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে এলাকাবাসী ক্লিনিকের সামনে দেহ রেখে ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। প্রায় চার ঘণ্টা পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশ সূত্রে দাবি, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। মিটমাটও হয়ে গিয়েছে।
এ দিকে, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে দেখা গিয়েছে, উনি এক জন হাতুড়ে চিকিৎসক। জেলার হাতুড়ে চিকিৎসকদের তালিকায় ওঁর নামও আছে। হাতুড়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। সে প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট হাতুড়ে চিকিৎসক রাজ্যের কোনও প্রশিক্ষণ কখনও নেননি।” এ ক্ষেত্রে তা হলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তিনি চিকিৎসা করছেন কী ভাবে? ইউনুস বলেন, “বিষয়টি খোঁজখবর করে দেখা হবে। আমাদের দফতরে অভিযোগ এলে, তা খতিয়েও দেখা হবে।” হাতুড়েদের সংগঠন ‘বেঙ্গল রুরাল ডক্টর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর রাজ্য সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তীর বক্তব্য, “রাজ্যের দেওয়া প্রশিক্ষণ থাকলে, তবেই হাতুড়ে চিকিৎসকেরা নিজস্ব ক্লিনিক খুলতে পারেন। তা না হলে নয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে কোনও পাশ করা ডাক্তার বা সরকারি হাসপাতালে রোগীকে পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা খোঁজখবর করা হবে।”
শুক্লার মা রিঙ্কু মণ্ডল জানান, রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মেয়ের জ্বর, গায়ে ব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। তার পরে গৌরান্ডির ওই হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে নিয়ে যাওয়া হয়। রিঙ্কুর সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ, “উনি একটি ইঞ্জেকশন দিয়েছিলেন। তার পরে, মেয়ের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়। মেয়েকে পরের দিন স্থানীয় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চার দিন ভর্তি ছিল। পরে মেয়েকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাই। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে ও মারা যায়।” মৃতার পরিবারের অভিযোগ, হাতুড়ের দেওয়া ইঞ্জেকশনের পরেই রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। মৃতার মামিমা মালতি মণ্ডলের সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ, “ভুল চিকিৎসার জন্যই এই মৃত্যু। সব দায় ওই চিকিৎসকের।”
এই পরিস্থিতিতে প্রায় ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। অভিযোগ, তার পরেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ক্লিনিক ও বাড়ির দরজা খুলে বেরোননি। তাতেই ক্ষোভ বাড়তে থাকে। অভিযোগ, এই সময়ে বিক্ষোভকারীদের একাংশ ক্লিনিক ও বাড়িতে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেন। দরজায় এলোপাথাড়ি ইট ছোড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কন্যাপুর ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশের সামনেই চলতে থাকে বিক্ষোভ।
ইতিমধ্যে পুলিশের মধ্যস্থতায় মৃতার আত্মীয় ও সংশ্লিষ্ট হাতুড়ের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তাতে মিটমাটও হয়ে যায় বলে দাবি। সকাল ১১টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
সংশ্লিষ্ট হাতুড়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সামনে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ছেলে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গত ২৯ জানুয়ারি ওই রোগীকে বাবার কাছে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল। কিন্তু এর পরে রোগীর শারীরিক অবস্থার কথা আর জানানো হয়নি। প্রায় ১৩ দিন পর হঠাৎ করে বাবার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
লালগঞ্জে রাজ্যের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও বাসিন্দারা কেন হাতুড়ের কাছে গিয়েছিলেন? স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সন্ধ্যায় অসুস্থ হয় শুক্লা। সে সময় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা থাকে না। তাই, বাধ্য হয়েই হাতুড়ের কাছে যেতে হয়েছিল। তাঁদের সূত্রে দাবি, সংশ্লিষ্ট হাতুড়ে অন্তত ৪০ বছর ধরে স্বাস্থ্য পরিষেবা দিচ্ছেন এলাকায়।