পূর্বস্থলীর ভান্ডারটিকুরিতে রামের মূর্তি তৈরি। নিজস্ব চিত্র ।
কোথাও গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া বসন, হাতে তীর-ধনুক। কোথাও তিনি সিংহাসনে বসে ভক্তদের অভয় দিচ্ছেন। রবিবার কালনার মহকুমার পালাপাড়াগুলিতে বিকিয়েছে রামের নানা মূর্তি। সরস্বতী পুজোর আগে অসময়ে এমন লক্ষ্মীলাভে হাসি ফুটেছে মৃৎশিল্পীদের মুখে।
কালনা শহর, সিঙ্গেরকোন, পাটুলি, ভাণ্ডারটিকুরি, জাহান্নগর এলাকার পালপাড়ায় প্রচুর শিল্পী রয়েছেন। সারা বছর তাঁরা বিভিন্ন মূর্তি গড়েই সংসার চালান। শিল্পীরা জানান, কার্তিক পুজো মেটার পরে বেশ কিছু দিন তেমন কাজ থাকে না। মূর্তি তৈরি কারখানায় ফের ব্যস্ততা ফেরে সরস্বতী পুজোর সপ্তাহ দু’য়েক আগে। এ বার ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন হওয়ার ঘোষণার পর থেকে রামচন্দ্রের পুজো নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। এ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ছোট, বড় মূর্তি তৈরির বরাত
আসতে থাকে।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জাহান্নগর পালপাড়ায় রবিবার গিয়ে দেখা যায়, কোথাও মূর্তিতে ধুতি পরানো হচ্ছে, কোথাও আঁকা হচ্ছে চোখ। আবার কোথাও পুজো উদ্যোক্তাদের গাড়িতে তোলা হচ্ছে মূর্তি।মৃৎশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘‘অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হওয়ার ঘোষণার পর থেকে বাড়তে থাকে রামের মূর্তি তৈরি হওয়ার বরাত। আগে এই সময় বসে কাটাতে হত। আশা করছি প্রতি বছরই একটি নির্দিষ্ট দিনে রামের পুজো বাড়বে।’’ উত্তম পাল, গোপাল পালেরা জানান, এ বার প্রথম বলে দাম কিছুটা কম রয়েছে মূর্তির। চার-পাঁচ ফুটের ২০টি মূর্তির দাম রাখা হয়েছে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। সব থেকে বড় মূর্তিটি তৈরি হয়েছে ভাণ্ডারটিকুরি স্টেশন এলাকায়। তার দাম প্রায় ৯ হাজার টাকা। ওই এলাকার মৃৎশিল্পী খোকন পাল বলেন, ‘‘রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া বসন পরা রামের মূর্তির ভাল চাহিদা রয়েছে। অসময়ে খানিক লাভ হচ্ছে।’’ কালনা শহরের মৃৎশিল্পী নারায়ণ দাসও বলেন, ‘‘ছোট ছোট ৫০০ টাকা দামের রামের মূর্তি তৈরি করেছি।এক দিনের উৎসব হলেও বিক্রি খারাপ নয়।’’ মৃৎশিল্পীদের অনেকেরই দাবি, সম্প্রতি খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রতিমা শুকোতে কিছুটা সমস্যা হয়। ফলে আগাম বরাতের বাইরে কোনও প্রতিমা তৈরি করে রাখতে পারেননি তাঁরা। রবিবার অনেক নতুন ক্রেতা মূর্তি কিনতে এলে ফিরিয়েও দিতে হয়।
বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু প্রত্যন্ত এলাকায় রামলালার মাটির মূর্তি কিনে পুজোয় মেতেছেন সাধারণ মানুষ। পুজোর সঙ্গে গীতা পাঠ, সংকীর্তন, ভোগবিলির মতো অনুষ্ঠানও রয়েছে।’’ তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, ‘‘আমরা সমস্ত ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। বিজেপি যেটা করছে,
সেটা রাজনীতি।’’