গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বুধবার পর্যন্ত ধুঁকছিল ‘বুড়ো’ প্রেক্ষাগৃহটি। তবে বৃহস্পতিবার থেকে ছবি বদলে গিয়েছে। লক্ষ্মীবার থেকে যে লক্ষ্ণীলাভ শুরু হয়েছিল, তাতে আবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন পুরনো সিনেমা হলের মালিক থেকে কর্মচারীরা। অবশেষে শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ ছবি দিয়ে ফেলে আসা যৌবনের দিনে ফিরল আসানসোলের সিঙ্গলস্ক্রিন ‘মনোজ’। পরিস্থিতি এমন যে প্রেক্ষাগৃহের সামনে ভিড় সামলাতে হচ্ছে পুলিশ বাহিনী দিয়ে। শাহরুখের সিনেমা দেখে হল ‘মনোজ’ থেকে বেরিয়ে আসা আট থেকে আশির মুখে হাসি। হাসছে বুড়ো সিনেমা হল ‘মনোজ’ও।
এক সময় রমরমিয়ে চলত আসানসোলের এই সিনেমা হলটি। কিন্তু মাল্টিপ্লেক্সের বাজার আর ওটিটি এবং সিরিয়ালের রমরমায় রাজ্যের অন্যান্য সিঙ্গলস্ক্রিনের মতো এই সিনেমা হলটিও ধুঁকছিল। বন্ধ হওয়ার মুখে ছিল প্রেক্ষাগৃহটি। ছবিটা বদলে গেল গত ৪৮ ঘণ্টায়। শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিনেমাপ্রেমীদের ভিড় ‘মনোজ’ সিনেমা হলের সামনে। যা দেখে সিনেমা হলের পাশে একটি পান-সিগারেটের দোকানদার দার্শনিকের সুরে বলছেন, ‘‘পুড়ে যাওয়া ছাই থেকে যেমন ফিনিক্স পাখির জন্ম হয়েছিল, তেমনই কোমায় চলে যাওয়া ‘মনোজ’ সিনেমা হল অক্সিজেন পাচ্ছে আমাদের কিং খানের ‘জওয়ান’-এর হাত ধরে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, আগে এই সিনেমা হলের জন্য তাঁর মতো আরও দশটা দোকানে জমিয়ে ভিড় হতো। সিনেমার বিরতির সময় হুড়মুড় করে দর্শকরা বেরোতেন। এটা ওটা কেনাকাটা, অর্ধেক দেখা সিনেমার গল্প এবং গান নিয়ে আলোচনা— সে সব দিন ক্রমশ অতীত হয়ে যাচ্ছিল। ‘মনোজ’ তা-ও গড়গড়িয়ে চলছে। ইতিমধ্যে আসানসোলের ‘চিত্রা’, ‘রূপকথা’, ‘গোধুলি’, ‘ডুরান্ড’, ‘মালঞ্চ’, ‘প্রিয়া’, ‘জগদীশ টকিজ’, ‘সুভাষ’, ‘শংকর টকিজ’, ‘বার্নপুর সিনেমা’ হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে কয়েক বছর হল। তা ছাড়া গ্যালাক্সি মলের আইলেক্স ও সেন্ট্রাল মলের কার্নিভাল মাল্টিপ্লেক্স সম্প্রতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সিনেমা দেখতে হলে দুর্গাপুরের মাল্টিপ্লেক্সে যান আসানসোল সিনেমাপ্রেমীরা। তার মধ্যে ‘মনোজ’ সিনেমা হলে এই ভিড় ভরসা যোগাচ্ছে হল কর্তৃপক্ষকে।
‘মনোজ’ সিনেমা হলের ম্যানেজার ইন্দ্রমোহন মিশ্র বলেন, ‘‘এই জেলা (পশ্চিম বর্ধমান) এবং এই জেলার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সেই ভাবে কোনও সিনেমা হল নেই। একটি সিনেমা হল রয়েছে চিত্তরঞ্জনে। আর একটি আমাদেরই আছে। তার নাম ‘মনোজ’। শাহরুখের এই নতুন সিনেমা দেখতে সব প্রেক্ষাগৃহে ভিড় একটু বেশিই হচ্ছে। এই ‘মনোজ’-এও ভাল ভিড় হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘শুক্রবার এতটাই ভিড় হয়েছে যে হিমশিম খেতে হয়েছে হলের কর্মীদের। পুলিশও রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। যে ভাবে ভিড় হচ্ছে, তাতে হলের কর্মীদের মনোবল অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে। কারণ, মৃতপ্রায় এই প্রেক্ষাগৃহ বহু বছর ধরে ধুঁকছিল।’’
‘জওয়ান’ সিনেমা শুরু থেকেই ফিল্ম বিশ্লেষক থেকে দর্শক, সবার ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে। ইতিমধ্যেই ‘ব্লকবাস্টার’ হয়েছে ছবিটি। হিন্দি, তামিল এবং তেলুগু— তিনটি ভাষায় ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে জওয়ান। প্রথম দিনে ছবিটি শুধুমাত্র হিন্দি ভার্সন থেকেই ৪৬ শতাংশ আয় করেছে।