বক্স অফিসে নিজের নজির ভাঙতে চলেছেন শাহরুখ। ছবি: সংগৃহীত।
‘পাঠান’-এর তুলনায় ‘জওয়ান’ যে দর্শকদের বেশি পছন্দ হয়েছে, বৃহস্পতিবার ছবিমুক্তির দিনেই তার আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। দু’টিই বড় বাজেটের অ্যাকশন ছবি। কিন্তু ‘জওয়ান’ ছবিতে বাড়তি একাধিক মশলা রয়েছে, যা সব ধরনের দর্শকের মনকে আকর্ষণ করেছে। ফলে সিনেমা ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বক্স অফিসে শাহরুখ নিজেই আরও এক বার নিজের নজির ভাঙতে চলেছেন। ‘জওয়ান’ দেখার পর বিশ্লেষণে আনন্দবাজার অনলাইন।
১) কাহিনিই সব: প্রথম সারির অভিনেতা, বিশাল বাজেট— সব কিছুই ব্যর্থ হতে পারে যদি গল্পটা ঠিক না থাকে। ‘পাঠান’-এ ‘র’-এর গোয়েন্দা শাহরুখ এবং ‘আউটফিট এক্স’ নামক এক সন্ত্রাসবাদী দলের মাথা জন আব্রাহামের মুখোমুখি দ্বৈরথকে কেন্দ্র করে গল্প এগিয়েছে। তুলনায় ‘জওয়ান’-এর গল্পে একাধিক স্তর রয়েছে। বাবা-ছেলে, দুই প্রজন্মের গল্প যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অতীত এবং বর্তমানের সহাবস্থান।
২) স্বয়ং শাহরুখ: যে কোনও ছবিতে শাহরুখ যে চালকের আসনে থাকবেন, তা অনুমেয়। ‘পাঠান’-এ শাহরুখের লুক নিয়ে চর্চা হয়েছে। কিন্তু ‘জওয়ান’-এ দ্বৈত চরিত্রে বাদশা। তার উপর ছবিতে তাঁর একাধিক লুক। প্রিয় তারকাকে বার বার নতুন ভাবে দেখতে চান দর্শক। সেখানে একই ছবিতে নানা অবতারে শাহরুখের উপস্থিতি অবশ্যই এই ছবির সাফল্যে অনুঘটকের কাজ করেছে।
৩) সহশিল্পীদের অভিনয়: ‘পাঠান’ ছবিতে অভিনয়ে শাহরুখ উতরে গেলেও জন আব্রাহাম এবং দীপিকা পাড়ুকোনের অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ডিম্পল কপাডিয়া ছাড়া বাকি পার্শ্বচরিত্রেরা সেই ভাবে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেননি। সেখানে ‘জওয়ান’-এর পার্শ্বচরিত্রে কিন্তু একাধিক শক্তিশালী অভিনেতা রয়েছেন। সেখানে খলনায়ক হিসাবে বিজয় সেতুপতি বা পুলিশের চরিত্রে নয়নতারা মন্দ নন। সান্যা মলহোত্র বা সুনীল গ্রোভারের অভিনয় গল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। ক্যামিয়ো চরিত্রে সঞ্জয় দত্তও মন্দ নন।
৪) নির্মাণে দাক্ষিণাত্য নীতি: ‘পাঠান’-এ পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ অনেক বেশি আধুনিক প্রযুক্তিকে তুলে ধরতে সময় ব্যয় করেছিলেন। ছবিতে হলিউডের প্রভাব স্পষ্ট। সেখানে ‘জওয়ান’ অনেক বেশি ‘দেশি’। অ্যাটলি দক্ষিণী পরিচালক। বাণিজ্যিক ছবি হিট করানোর ফর্মুলা তাঁর নখদর্পণে। ছবির দ্রুত গতির সিনেমাটোগ্রাফি এবং জমকালো অ্যাকশন দর্শককে আকৃষ্ট করে। সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে অনিরুদ্ধ রবিচন্দ্রের জমকালো আবহসঙ্গীত। ফলে যা হওয়ার, সেটাই হয়েছে। দর্শক প্রেক্ষাগৃহ থেকে হাসিমুখে বেরিয়েছে।
৫) আবেগ এবং সামাজিক বার্তা: ‘পাঠান’ ছবির কেন্দ্রে ছিল সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তা। গল্পের চলন ছিল একরৈখিক। ‘জওয়ান’-এ কিন্তু কাহিনির পরতে পরতে দেশের একাধিক বাস্তব সমস্যাকে গুঁজে দিয়েছেন পরিচালক অ্যাটলি। ফলে দর্শকের আবেগও বাধ মানেনি। এক দিকে রয়েছে অসাধু অস্ত্র ব্যবসায়ী, দেশদ্রোহিতার মতো বিষয়। অন্য দিকে রয়েছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, কৃষকমৃত্যু এবং সর্বোপরি সরকার গঠনে নাগরিকদের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। পাশাপাশি, নারী ক্ষমতায়ন এবং দুষ্টের দমনে রক্ত গরম হয়েছে দর্শকের। অনেকেই মনে করছেন, শাহরুখের সাম্প্রতিক কোনও ছবিতে এতগুলি সামাজিক সমস্যাকে তুলে ধরা হয়নি।