জঙ্গলের এই পথে মেলে গয়নার ফাঁকা বাক্স। নিজস্ব চিত্র।
হাত-পা বেঁধে পুলিশকর্মীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় তদন্তে নামলেন সিআইডি ও ফরেন্সিক দলের সদস্যেরা। সোমবার বিকেলে সিআইডির চার সদস্যের একটি দল আউশগ্রামের ছোড়া ফাঁড়িতে আসেন। সেখান থেকে যান ছোড়া কলোনির কারগিল পাড়ার বাসিন্দা, পুলিশকর্মী সুশান্ত বিশ্বাসের বাড়িতে। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরে বাড়ির আশপাশ ঘুরে দেখেন তাঁরা। ডাকাতির পরে কোন পথে ডাকাতেরা পালায়, তাও খতিয়ে দেখেন। তিন সদস্যের ফরেন্সিক দলটিও বাড়ির দরজা, আলমারি, দেওয়ালের নানা জায়গা থেকে আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেন।
তদন্তকারীদের অনুমান, ডাকাতির পরে ওই দুষ্কৃতীরা মাঠের রাস্তা ধরে সেচখালের বাঁধ পর্যন্ত চলে যায়। বাঁধ পেরিয়ে যায় হেদোগড়িয়া, আদুরিয়া। পুলিশের অনুমান, মোটরবাইকে করে দুষ্কৃতীরা এলেও বাইকগুলি তারা জঙ্গলে কোথাও লুকিয়ে রেখেছিল। জঙ্গল এলাকা সাধারণত ফাঁকাই থাকে। সেই সুযোগই কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। এ দিন সেচখালের বাঁধের পাশে একটি জায়গা থেকে ছিনতাই হওয়া গয়নার ফাঁকা বাক্স কুড়িয়ে পায় পুলিশ। ওই বাঁধ ধরে এগোলেই খুব কম সময়েই পৌঁছনো যায় পানাগড়-মোড়্গ্রাম হাইওয়েতে। সেখান থেকে ভিন্ জেলায় যাওয়াও সহজ। পুলিশের অনুমান, ঘটনায় ভিন্ জেলার দুষ্কৃতীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনও জড়িয়ে ছিল।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, আউশগ্রামের পলাশতলার চুরির ঘটনার কয়েকদিন পরে পঞ্চগঙ্গা এলাকায় মাঠের মাঝে ধানের গাদার নীচ থেকে গয়নার ফাঁকা বাক্স, ভোটার, আধার কার্ড পরিচয় পত্র মিলেছিল। জেলা পুলিশের ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বীরেন্দ্রকুমার পাঠক বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করা যায় দ্রুত জাল গুটিয়ে
আনা যাবে।’’
তবে আতঙ্ক কাটেনি ওই পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের। দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়ায় এলাকার নিরাপত্তার জন্য নিজেরাই গ্রামরক্ষী বাহিনী গঠন করেন। চণ্ডীতলায় গ্রামরক্ষী বাহিনী তৈরির সভায় হাজির ছিলেন পুলিশকর্মীরাও। স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত ঠাকুর, মন্মথ সরকার, মনীন্দ্রনাথ পান্ডে, চায়না বিশ্বাসেরা বলেন, “শনিবারের রাতের ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কিত। ফের যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে তাই আমাদের তরফে পুলিশের কাছে গ্রামরক্ষী বাহিনী তৈরির ব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়।’’ সোমবার থেকেই গ্রাম পাহারা শুরু হবে বলে জানান তাঁরা।
সুশান্তর স্ত্রী জয়ন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘‘একা ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকি। সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছে, আবার যদি এমন হয়!’’ সুশান্তও বলেন, “আমি কাজে চলে যাব। কিন্তু পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় থাকব। আপাতত আত্মীয়েরা রয়েছেন। তবে পুলিশের উপরে ভরসা আছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুভাষিনী হালদার, হিরন্ময়ী সেনরাও বলেন, “জঙ্গলের পাশে বাস। আমাদের ছেলেরা বাইরে থাকে। সন্ধ্যা থেকেই দরজায় তালা লাগিয়ে রাখছি।’’
জানা গিয়েছে, ডাকাতির ঘটনার পরে আউশগ্রামের পলাশতলার বাসিন্দা অনিলকান্তি দত্তের বাড়িতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পরিবারের দাবি, নিরাপত্তার কথা ভেবেই বাড়ির চারধারে ছ’টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, নিয়মিত টহলদার গাড়ি ঘোড়ে। তাছাড়া সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন। এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।