বোমা নিষ্ক্রিয় করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইডি-র বম্ব স্কোয়াড। আদালতের পথে ধৃত। (বাঁ দিক থেকে) ছবি: কাজল মির্জা
পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির পরে, এ বার পূর্ব বর্ধমানের গলসি। ফের যাত্রিবাহী বাস থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দূরপাল্লার বাসে মালপত্র তোলার আগে সে সব পরীক্ষা করার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করা ২০টি তাজা বোমা বুধবার সকালে কুলগড়িয়ার কাছে সেচখালে নিষ্ক্রিয় করে সিআইডি বম্ব স্কোয়াড। বোমা পাচারের অভিযোগে ওই বাস থেকে ধৃত কলকাতার বদরতলা এলাকার যুবক মহম্মদ সরফরাজ আনসারিকে এ দিন বর্ধমান আদালতে তোলা হয়েছে। ধৃতকে তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিল পুলিশ। আদালত চার দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘‘সিআইডি বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে।’’
ধৃত যুবক সংবাদমাধ্যমের কাছে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুলিশের দাবি, তিনি তাদের কাছে ওই ঘটনায় যুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন। দুর্গাপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য ওই বাসে চেপেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, পানাগড়ের সেনা ছাউনির গোয়েন্দা মারফত তাদের কাছে খবর আসে, ধর্মতলা থেকে ছাড়া সিউড়িগামী দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি যাত্রিবাহী বাসে বোমা পাচার করা হচ্ছে। সে মতো মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরে কুলগড়িয়া কাছে নাকা-তল্লাশি শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ওই বাসটিকে থামিয়ে পুলিশ ভিতরে তল্লাশি শুরু করে। বাসের পিছনের দিকে একটি আসনের তলায় প্যাকিং বক্স দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। খুলে দেখা যায়, ভিতরে বোমা রয়েছে। ওই আসনে বসে ছিলেন সরফরাজ। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। থানায় বোমা ও ওই যুবককে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে, যাত্রীরা ওই বাসে রওনা দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাসটি সিউড়ির ডিপোর। সেখানকার আধিকারিকদের কাছে পুলিশ বাসটি কখন কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছিল, সে সম্পর্কে জানতে চিঠি দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবক বোমা নিয়ে বাসে ওঠার কথা মানতে চাননি। তাই বাসে ওই বোমা ভর্তি বাক্স কে বা কারা তুলেছিলেন, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ বাস টার্মিনাসের সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড়ের চেষ্টা করছে। কলকাতার কোন এলাকা থেকে, কী মতলবে, কোথায় বোমাগুলি পাঠানো হচ্ছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
বাসের চালক বদরোজ জামাল বলেন, ‘‘বাসের মধ্যে রয়েছে ঘূণাক্ষরেও আমরা বুঝতে পারিনি। বাসের মধ্যে ফেটে গেলে কী কাণ্ড ঘটে যেত, ভেবেই আতঙ্কিত হচ্ছি।’’
ঘটনা হল, এটাই প্রথম নয়। চলতি বছরের অগস্ট মাসের শেষের দিকে, আগাম খবরের ভিত্তিতে পানাগড় সেনাছাউনির গোয়েন্দা-কর্তারা একটি বেসরকারি বাস ৮০ কিলোমিটার ধাওয়া করেন। পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ডুবুরডিহি চেকপোস্টে বাসটিকে আটকান কুলটি থানার চৌরঙ্গি ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা। বাসের ডিকি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০টি কৌটো বোমা। বিহারের নম্বরপ্লেট দেওয়া বাসটি কলকাতার বাবুঘাট থেকে ছেড়ে বিহারের গয়া যাচ্ছিল।
ওই পথের নিত্যযাত্রীদের একাংশের বক্তব্য, দু’বার সেনাছাউনির গোয়েন্দা এবং পুলিশের তৎপরতায় রক্ষা পাওয়া গেল। কিন্তু ভবিষ্যতে যে এ ভাবে বোমা পাচার হবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়? তাঁদের দাবি, অন্তত সরকারি বাসে মালপত্র তোলার আগে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হোক।
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ভাতার কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘গলসিতে কী ঘটেছে, জানি না। যেখানে সেখানে যাত্রীরা মালপত্র নিয়ে বাসে ওঠেন। সব জায়গায় কী ভাবে মালপত্র পরীক্ষা করা সম্ভব? তবে পুলিশের উপরে আস্থা রয়েছে।’’