আমিনা শেখ। নিজস্ব চিত্র।
প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন মহিলা। অভিযোগ, বারবার ডেকেও সাড়া পাননি চিকিৎসক, নার্সদের। তাঁরা তখন ‘মোবাইলে ব্যস্ত’। অভিযোগ, উঠতে গিয়ে বিছানাতেই প্রসব হয়ে যায়। সদ্যোজাত পড়ে যায় মেঝেয়। প্রসূতির দাবি, পরিস্থিতি দেখে ছুটে আসেন ডাক্তারেরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটি ভর্তি রয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে।
সোমবার কর্তব্যে গাফলতির অভিযোগে বর্ধমান থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই প্রসূতি। হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষের দাবি, ‘‘আমরা এই মর্মে কোনও অভিযোগ পাইনি। ঘটনার কথা শুনে শিশুটির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। আপাতত শিশুটির মাথায় কোনও চোট নেই বলেই মনে হচ্ছে৷ শিশু বিভাগের প্রধানকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।’’ জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
পূর্বস্থলীর নাদনঘাট থানার অর্জুনপুকুরের ওই প্রসূতি ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শনিবার ভোর ৫.২৫ মিনিট নাগাদ প্রসব বেদনা নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন আমিনা শেখ। ব্যথা বাড়ার পরে চিৎকার করে কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের ডাকতে শুরু করেন তিনি। অভিযোগ, কেউ সাড়া দেননি। তাঁরা নিজেদের মত গল্পগুজব ও মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলেও অভিযোগে দাবি করেছেন ওই মহিলা। হাসপাতালের বিছানাতেই প্রসব হয়ে যায় তাঁর। ওই অবস্থায় সদ্যোজাত মেঝেতে পড়ে যায় বলেও অভিযোগ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে আইসিইউ-এ ভর্তি করানো হয়। আমিনা বলেন, ‘‘কর্তব্যরত ডাক্তার ও নার্সদের গাফিলতিতেই এই ঘটনা ঘটেছে। বারবার ডেকেও সাড়া পাইনি কারও। বাচ্চা মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরে ডাক্তারেরা ছুটে আসেন৷ আগে এলে এই ঘটনা ঘটত না।’’ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
তাঁর স্বামী সফিজুল শেখ ছোটখাট ব্যবসা করেন। এটি তাঁদের তৃতীয় সন্তান। তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা একটু যত্ন নিলেই এই ঘটনা ঘটত না। তাঁরা মোবাইলে মত্ত ছিলেন। আমার সন্তানের অবস্থা খারাপ। এই রকম আর যেন কারও না হয়, তাই দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাইছি।’’
সোমবার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় বহির্বিভাগের চারতলায় সিসিইউয়ের সামনে বসে রয়েছেন ওই দম্পতি। সদ্যোজাতের সিটিস্ক্যান করানো হবে বলে জানান তাঁরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। পুলিশের কাছে ওই অভিযোগপত্র চেয়েছি। অভিযোগপত্র পেলে আমরা তদন্ত শুরু করব।’’ পুলিশের দাবি, অভিযোগপত্র মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতাল সুপার পাঠানো হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এক একটি বিভাগে পাঁচ থেকে ছ’জন করে সিস্টার থাকেন। সঙ্গে থাকেন চিকিৎসক এবং অন্য কর্মীরা৷ সবার নজর এড়িয়ে কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট চৈতালী যশ বলেন, ‘‘কী হয়েছিল জানি না। খোঁজ নিয়ে জেনে বলতে পারব।’’