মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
দুর্গাপুর পুরসভার ‘পারফর্মেন্স রিপোর্ট’ খতিয়ে দেখে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তিকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে, বিরোধী দলগুলির নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া, মেয়র তথা পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে বহু আগে থেকেই তাঁরা ধারাবাহিক ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। মেয়র অবশ্য বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত না জেনে কিছু বলব না।’’
এ দিন নবান্নের বৈঠকে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে দুর্গাপুর পুরসভার রিপোর্ট কেন খারাপ তা জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। পুরমন্ত্রীকে সরাসরি বলতে শোনা যায়, ‘মেয়র কাজ করেন না’। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, তা হলে পুরসভার বৈঠক ডেকে নতুন কাউকে মেয়র করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর এই নির্দেশের পরে, শহরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল কাউন্সিলর সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেন, ‘‘মেয়রের কাজকর্মের ধরন ঠিক নয়। উনি এমন ভাবে আচরণ করেন যেন সবাই ওঁর অধীনে কাজ করেন।’’
এ দিকে, বিরোধীদের কটাক্ষ, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাঁদের তোলা ধারাবাহিক অভিযোগেই ‘শিলমোহর’ দিল। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘২০১৭-য় ভোট লুট করে দুর্গাপুর পুরসভা দখল করে তৃণমূল। এখন তৃণমূলনেত্রী মেয়রকে বলছেন ‘গুড ফর নাথিং’। পুর-বোর্ড কাজ করে না, নিজেই যখন স্বীকার করছে রাজ্য প্রশাসন, তখন এ বোর্ড ভেঙে দেওয়া দরকার।’’ বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘পুরভোটে জোর করে বোর্ড দখল করেছে তৃণমূল। পুর-পরিষেবা যে বেহাল, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তা স্বীকার করে নিলেন।’’
আরও পড়ুন: আগামী ৩ বছরে রাজ্যে ৩৫ লক্ষ কাজের ঘোষণা মমতার
ঘটনাচক্রে, পুরসভা পরিচালনার নানা বিষয় ও সিদ্ধান্ত নিয়ে দুর্গাপুর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের সঙ্গে মেয়রের ‘দ্বন্দ্ব’ অতীতে বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মেয়রকে সতর্ক করে দিয়ে প্রশাসনিক দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দেন। সম্প্রতি পুরসভায় অস্থায়ী এক কর্মীকে কাজে লাগানোর বিষয়ে মতান্তরের জেরে বোর্ড মিটিং ছেড়ে মেয়র বেরিয়ে যান বলে অভিযোগ তুলে কাউন্সিলরদের একাংশ ক্ষোভ উগরে দেন সংবাদমাধ্যমে। যদিও মেয়র অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তবে কাজকর্ম এবং পুরসভা পরিচালনার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেয়র বলেন, ‘‘আমি কী কাজ করছি, তা দুর্গাপুরের মানুষ ভালই জানেন।’’
তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নেত্রী সব দিক বিবেচনা করেই, যা নির্দেশ দেওয়ার দেন। তবে এটা আমাদের দলের ভিতরের বিষয়। বিরোধীদের উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই।’’
আরও পড়ুন: মূর্তি বিতর্কের পর অমিতের মালা ছবিতেই