বেলারাণী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাংসের সঙ্গে চাটনিও। নিজস্ব চিত্র।
মূল্যবৃদ্ধির ঝাঁঝে বাজারে ঢোকা দায়। বরাদ্দ না বাড়ায়, অনেক স্কুলই মিড-ডে মিলের মেনুতে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরের কানাইনাটশাল শালবাগানের বেলারাণী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলে ভাত, মুরগির মাংস ও চাটনি দেওয়া হল। শুধু এ দিনই নয়, সপ্তাহের অন্যান্য দিনেও ডাল, পোস্ত, পটল, ডিম, সয়াবিনের তরকারিরও ব্যবস্থা রাখছেন শিক্ষকেরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “অগ্নিমূল্যের বাজারেও শিক্ষকেরা চাইলে মিড-ডে মিলে ভাল খাবার দেওয়া যে সম্ভব, তা করে দেখানোর জন্য ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ধন্যবাদ।’’
ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ দলুই, দিশা পাল এবং পঞ্চম শ্রেণির সারমিনা খাতুন, দেবলীনা সাহা, শেখ রজোদের কথায়, “আগেও স্কুলে মুরগির মাংস দিয়েছিল। প্রতি শুক্রবার ডিম দেওয়া হয়। সপ্তাহের অন্য দিন পোস্ত, পটল, সয়াবিনের তরকারি ও ডাল দেওয়া হয়। বাড়ির মতো রান্না।’’
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, খাবারের মান ও পরিকাঠামো ভাল হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে এক সময়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ৯০ থাকলেও, এখন ২৬০ হয়ে গিয়েছে। দৈনিক গড় হাজিরাও ৭৫-৮০ শতাংশ থাকছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, তাঁরা নিজেরা ৮০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে পড়ুয়াদের খাবার জায়গার ব্যবস্থা করেছেন।
জেলার অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, মিড-ডে মিলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র প্রতি দৈনিক বরাদ্দ চার টাকা ৯৭ পয়সা। তা আর বাড়েনি। রান্নার জ্বালানি ও মুদিখানার সামগ্রী ও আনাজ কিনতে গিয়েই বরাদ্দে টান পড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক স্কুলে সপ্তাহে এক দিন ডিম খাওয়ানোও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্ধমানের কেশবগঞ্জ প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তারা সপ্তাহে এক দিন গোটা ডিমের বদলে অর্ধেক ডিম খাওয়াচ্ছেন। বর্ধমানের আর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানস ঘোষের দাবি, “মেনুতে ডিম রাখা যাচ্ছে না। সেখানে মুরগির মাংস! সম্ভবত ওই স্কুলের শিক্ষকরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে পড়ুয়াদের খাওয়াচ্ছেন।’’
ওই স্কুলের শিক্ষিকা শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়, লক্ষ্মী সরকারদের দাবি, “মেনুতে যাতে ঘাটতি না হয়, সে জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতি মাসে এক দিন মাংসের খরচের দায়িত্ব তুলে নেন।’’
বৃহস্পতিবার সেই দায়িত্ব পালন করেছেন স্কুলের টিচার-ইনচার্জ উজ্জ্বল মণ্ডল। তাঁর কথায়, “গত দু’মাস ধরে মিড-ডে মিল চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক স্কুল বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা অবশ্য পড়ুয়াদের মেনুতে কোনও কাটছাঁট করিনি। সে জন্যে প্রতি মাসে দু’-আড়াই হাজার টাকার ঘাটতি হচ্ছে।’’
ঘাটতি মেটাচ্ছেন কী ভাবে? উজ্জ্বল বলেন, “আগে মন্তেশ্বরের ব্লকের উত্তরপাড়া স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। বর্ধমান থেকে যাতায়াত করতে গিয়ে মাসে দু’-আড়াই হাজার টাকা চলে যেত। সময়ও নষ্ট হত। এখন শহরের ভিতর স্কুলের দায়িত্ব পাওয়ায় টাকা-সময়, দুটোই বাঁচছে। তাই স্কুলের বাচ্চাদের জন্য প্রতি মাসে ওই টাকা খরচ করতে আমার অসুবিধা হয় না।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি, এখন বড়নীলপুর, শালবাগান, গোপালনগর থেকেও পড়ুয়ারা স্কুলে আসছে। ঘরে জায়গা না হওয়ায় বারান্দায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। একটা ঘরের খুবই প্রয়োজন। জেলা সর্বশিক্ষা মিশন জানিয়েছে, নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেলে দেখা হবে।