বৈঠকের পরে। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের ১৬টি জেলায় একশো দিনের প্রকল্প ও আবাস যোজনার কাজ দেখতে সোমবার মাঠে নামল কেন্দ্রের বিশেষ দল। আটটি দলে ১৬ জন প্রতিনিধি এই রাজ্যে এসেছেন। রবিবার বিকেলেই পূর্ব বর্ধমানের সার্কিট হাউসে পৌঁছন কেন্দ্রীয় দলের দুই সদস্য। সোমবার জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়ঙ্কা সিংলার সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে জেলাশাসকের দফতর থেকে যে সব ব্লকে ওই দল পর্যবেক্ষণ করবে, সেখানকার বিডিওদের সঙ্গেও ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক হয়। দুপুরের দিকে তাঁরা খণ্ডঘোষের লোদনা পঞ্চায়েতে গিয়ে রাত পর্যন্ত নানা নথি খতিয়ে দেখেন। জেলাশাসক সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা এসেছেন। আমাদের সঙ্গে একটি বৈঠকও হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে জেলার তরফে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় পূর্ব বর্ধমানের ভূমিকা, বিভিন্ন পঞ্চায়েতের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেখানে জানানো হয়, আবাস যোজনায় এ বছর রাজ্যের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলা দ্বিতীয় স্থানে আর শেষ পাঁচ বছরের হিসেবে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সার্বিক ভাবে জেলায় প্রকল্পের ৯৩ শতাংশ বাড়ি তৈরি শেষ হয়ে গিয়েছে বলেও জানানো হয়। ওই দলটি জেলাশাসককে জানায়, গোটা দেশে তিনশোটি জেলায় কেন্দ্রের ওই দু’টি প্রকল্পের অগ্রগতি, সমস্যা ও নথি যাচাই করবে তারা।
দলটির দাবি, কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ২, গলসি ২, মঙ্গলকোট ও খণ্ডঘোষ ব্লককে বেছে নেওয়া হয়েছে। চারটি ব্লকের লোদনা, খণ্ডঘোষ, বেরুগ্রাম, অমরপুর, দেবশালা, এড়াল, গলসি, আদড়া, সাটিনন্দী, মঙ্গলকোট, নিগন ও ক্ষীরগ্রাম পঞ্চায়েত সরেজমিন পরিদর্শন করবে তারা। বৈঠকে হাজির জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, দু’টি প্রকল্পের পাঁচটি কাজ দেখবেন তাঁরা। তার মধ্যে শেষ হওয়া তিনটে কাজ আর চালু থাকা দু’টি কাজ থাকবে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, রবিবার পর্যন্ত জেলায় এক কোটি ৯৬ লক্ষ ৮১ হাজার ৯২৯ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। তাতে কাজ পেয়েছেন ন’লক্ষ এক হাজার ৩০ জন। একশো দিনের প্রকল্পে জেলায় খরচ হয়েছে ৫৭১ কোটি টাকা। সেই সূত্র ধরে কোন চারটে ব্লক শ্রমদিবস তৈরিতে ও খরচে এগিয়ে রয়েছে, তা বাছাই করা হয়েছে। একই ভাবে তিনটে পঞ্চায়েতকে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা বেছে নিয়েছেন। এ দিন দুপুরে খণ্ডঘোষের লোদনা পঞ্চায়েতে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখেন তাঁরা। রাত পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। আজ, মঙ্গলবার খণ্ডঘোষেরই সদর পঞ্চায়েত ও বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতে যাওয়ার কথা তাঁদের।
এ দিন বিডিওদের সঙ্গে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক করে কেন্দ্রীয় দলটি। বিডিওদের জানানো হয়, নথি ও প্রকল্প পরিদর্শন ছাড়াও, পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, স্থানীয় সদস্য, গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী থেকে স্থানীয় মানুষজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রকল্পগুলিতে কী-কী খামতি রয়েছে, কোথায় অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছেন, জানার চেষ্টা করা হবে। পাঁচ দিন ধরে ব্লক-পঞ্চায়েত ঘুরে দেখার পরে, শনিবার ফের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হবে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই বৈঠকেকেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা কী দেখলেন, আমাদের জানাবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট জমা দেবেন। সেখানে কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে, কী করা উচিত তারও পরামর্শ দেওয়া থাকবে।’’