কাজ খতিয়ে দেখছেন পরিদর্শকেরা। নিজস্ব চিত্র
জেলায় প্রশাসনিক সভায় এসে কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরের দিন, শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় কেন্দ্রের আর্থিক অনুদানে চলা প্রায় ১০টি প্রকল্পের কাজ কেমন চলছে, তা সরেজমিন পরিদর্শন শুরু করল ‘ন্যাশনাল লেভেল মনিটর’ (এনএলএম) দল। জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করার পরে আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিল্বগ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়ে যাওয়া ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা’ (পিএমজিএসওয়াই) প্রকল্পের একটি রাস্তা শুক্রবার ঘুরে দেখেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নদিয়া থেকে এনএলএম দলের দুই সদস্য, অম্বুজ মহাপাত্র এবং আর উইলসন পূর্ব বর্ধমানে আসেন। ওই দিনই বর্ধমানের গোদার স্বাস্থ্যনগরীর মাঠ থেকে কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শন নিয়ে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা দেয়নি। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের টাকাও দিচ্ছে না।’’ ছাড়পোকা কামড়ানো থেকে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, জামাকাপড় কিনলেও কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হচ্ছে হচ্ছে বলে কটাক্ষ করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজের টাকা দিয়ে পাঠাও কেন্দ্রীয় দল। তা না হলে বাংলা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।’’
শুধু একশো দিনের প্রকল্প নয়, আবাস যোজনার উপভোক্তা বাছাইয়ের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী সভায় বলেন, ‘‘স্কুটার থাকলে কেন আবাস যোজনার ঘর পাবেন না সাধারণ মানুষ! গ্রামাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের জন্য স্কুটার বা মোটরবাইক থাকতে পারে না? তাই বলে কারও বাড়ি পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেবে!’’ পূর্ব বর্ধমান জেলায় একশো দিনের কাজে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার জনের মজুরি বকেয়া রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দ্বিতীয় পর্ব, ‘আবাস সফটে’ ৯৮ শতাংশের বেশি বাড়ি তৈরি হয়েছে। চলতি মরসুমের আবাস প্লাসে ৫৬,৭১৫টি বাড়ি তৈরির অনুমতি পেয়েছে জেলা।
এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ এনএলএম দলটি জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ও প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বৈঠক করার পরে কোন কোন পঞ্চায়েত তাঁরা যাবেন, সেটা ঠিক হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ থাকায় তাঁরা ওই প্রকল্প দেখতে আগ্রহী। তবে তা স্পষ্ট করেননি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-সহ কিছু কাজও তাঁরা দেখবেন বলে জানান। দলের এক সদস্যের দাবি, ‘‘নিয়মমাফিক নজরদারি করার জন্যই কেন্দ্রের তরফে দল পাঠানো হয়েছে। আমরা নিজেরাই কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ, পঞ্চায়েতের নথিপত্র দেখব।’’ পরের বৃহস্পতিবার দলটি ফের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লি ফিরে যাবে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন বেলা পৌনে ২টো নাগাদ আউশগ্রাম ১ ব্লকে যায় দলটি। সেখানে ১০০ দিনের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বিষয়েও খোঁজ নেন। প্রথম কিস্তির টাকা নেওয়ার পরেও কয়েকজন কেন বাড়ি তৈরি করেননি, সেই খোঁজ করেন। তারপরে বিল্বগ্রাম পঞ্চায়েতে ১০ মিনিটের ছোট বৈঠক সেরে বিডিও (আউশগ্রাম ১) অরিন্দম মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা দেখতে স্থানীয় তকিপুর গ্রামে যান তাঁরা। প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে দেখেন, ছবি তোলেন। ওই কাজের জন্য লাগানো বোর্ডও খুঁটিয়ে দেখেন। বোর্ডে কী লেখা রয়েছে, কেন্দ্রীয় দলের সদস্যদের তা বুঝিয়ে দিতে দেখা যায় বিডিওকে। সড়ক সম্পর্কিত তথ্য কেন ফ্লেক্সের উপরে লেখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। স্থায়ী ভাবে তথ্য লেখার জন্য বিডিওকে বলেন। রাস্তার কাজ তাঁরা সন্তুষ্ট, সেই কথাও জানান। সে কথা ব্লক প্রশাসনকে তাঁরা জানিয়ে যান। আজ, শনিবারও আউশগ্রাম ১ ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েত ঘোরারকথা দলটির।