জামালপুরের ঘোষাল বাড়ির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
মুঘল আমলের কালীপুজোয় আজও মেতে ওঠে গ্রাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ৪৮৩ বছর পেরিয়ে গিয়েছে জামালপুরের কোলসড়া গ্রামে সিদ্ধেশ্বরী কালীপুজোর। প্রথমে ঘোষাল পরিবার পুজোর দায়িত্বে থাকলেও এখন এটি গ্রামের একমাত্র সর্বজনীন পুজো। এমনকি গ্রামের কোনও বাড়িতে কালী মূর্তি, ছবি বা ক্যালেন্ডারও রাখা হয় না, দাবি বাসিন্দাদের।
ঘোষাল পরিবারের সদস্যেরা জানান, ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শেরশাহের আমলে এই কালীপুজোর সূচনা হয়। শেরশাহ নিজে পুজো সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ৫০০ বিঘা জমি দান করেছিলেন। ১৮২৯ সাল পর্যন্ত তাঁদের হাতেই ছিল পুজোর দায়িত্ব। ১৮৩০ সাল থেকে পুজোর জন্য সেবাইত নিযুক্ত করা হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে গ্রামের বারোয়ারি পুজোর রূপ নেয় ওই কালীপুজো। তবে পুরনো দিনের রীতি মেনে গ্রামে আর কোনও কালীপুজোর প্রচলন আজও হয়নি। এমনকি গ্রামের কোনও বাড়িতে কালী মূর্তি বা পট চিত্রও রাখা হয় না। সিদ্ধেশ্বরী কালি মা কোলসড়া গ্রামের একমাত্র অধিষ্ঠাত্রী দেবী, জানান বাসিন্দারা।
দেবী মূর্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষত্ব। গ্রামে দেবীর মন্দিরে একটি ত্রিশূল প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সেই ত্রিশূলকে আধার করেই দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয়। বিসর্জনের সময় মূর্তি একেবারে বিসর্জন করা যায় না। মন্দিরের দরজা বন্ধ অবস্থায় পুরোহিতেরা দেবীর মূর্তি খণ্ডিত করেন। তারপরে ঝুড়ি করে সেই মূর্তি নিয়ে গিয়ে পুকুরে বিসর্জন করা হয়। তবে প্রতি বছর মূর্তি বিসর্জন করা হয় না। কোনও কারণে মাটির মূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে বা ভেঙে গেলে তবেই সেই মূর্তি বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি তৈরি করা হয়।
ঘোষাল পরিবারের সদস্য সমীর ঘোষাল জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ দিগম্বর ঘোষাল ছিলেন মুঘল সম্রাটের কর্মচারী। সেই সময়ে জিটি রোড নির্মাণের কাজ চলছিল। রাজস্ব আদায় করতে নদী পেরিয়ে তিনি এই গ্রামে আসতেন। একদিন নদীর ধারে রাত কাটানোর সময়ে স্বপ্নাদেশ পান পুজো শুরু করার। সেই থেকে পুজো শুরু।