অনুব্রত মণ্ডল
পর পর দু’বার সিবিআই হেফাজতের পর অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সহগল হোসেনকে গরু পাচার মামলায় এ বার জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল সিবিআই আদালত। শুক্রবারই সহগলের দ্বিতীয় দফার সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাঁকে আসানসোলের সিবিআই আদালতে তোলা হয়। বিচারকের নির্দেশ, আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ ১৪ দিন জেল হেফাজতে থাকবেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রতের দেহরক্ষী। জেল হেফাজতে থাকাকালীন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
গত ১০ জুন প্রথম বার সিবিআই আদালতে তোলা হয় সহগলকে। ওই দিন শুনানির পর তাঁকে সাত দিনের সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ১৭ জুন প্রথম দফার সিবিআই হেফাজতের মেয়াদ শেষ হলে আবারও তাঁকে সাত দিন সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষে শুক্রবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে সহগলকে কলকাতার নিজাম প্যালেস থেকে বেলা ১১টা নাগাদ আসানসোলে নিয়ে আসা হয়।
আদালতে সিবিআই দাবি করেছে, এই গোটা সময় জুড়ে সহগলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু নতুন তথ্য জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী আদালতে ‘সিডিআর’ জমা দিয়ে দাবি করেন, গরুপাচার-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত এনামুল হকের সঙ্গে বেশ কয়েক বার সহগলের কথা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এনামুলকে মেলও পাঠিয়েছেন সহগল।
সূত্রের খবর, সহগলের বিষয়সম্পত্তির ‘সিজার লিস্ট’ তুলে ধরে সিবিআই দাবি করেছে, রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে থাকা সহগল অনুব্রতের দেহরক্ষী হওয়ার পর প্রচুর সম্পত্তি করেছেন। তাঁর ছোট্ট বাড়ি প্রায়-প্রাসাদ হয়ে উঠেছে। কলকাতার নিউটাউন, বোলপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ফ্ল্যাট, জমি, গয়না ও অন্যান্য সম্পত্তির বহরও বেশ চোখে পড়ার মতো। কনস্টেবল থেকে ক্রমে ধনকুবের হয়ে ওঠা সহগলের সম্পত্তির পরিমাণ অন্তত ১০০ কোটি টাকা বলেই দাবি তদন্তকারীদের।
এর প্রেক্ষিতে আদালতে সহগলের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘১৪ দিন সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন সহগলের কাছ থেকে একটি বিদ্যুৎ বিল ছাড়া আর কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। সহগলের ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি আছে বলে সিবিআই যে দাবি করেছে, তার কোনও প্রমাণ নেই। সহগলকে গ্রেফতার করার পর তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে যা নথি উদ্ধার হয়েছে, টাকার অঙ্কে তা এক কোটিও হবে না। মাত্র কয়েক লক্ষ টাকার জিনিস উদ্ধার হয়েছে।’’ এক জন সরকারি কর্মচারীকে রাজ্য সরকারের অনুমতি না নিয়ে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনির্বাণ।
শুক্রবার সহগলের জামিনেরও আবেদন করেছিলেন তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘সহগলের মা অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সন্তানও অসুস্থ। তাই সহগলকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হোক।’’ পাল্টা সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, ‘‘সহগলের কাছ থেকে যা যা উদ্ধার হয়েছে, তার সবই উল্লেখ রয়েছে সিডিআর-এ। ওই সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েক জন পুলিশ আধিকারিক ও রাজনৈতিক নেতা জড়িত থাকতে পারেন। তাই, সহগলকে জামিন দেওয়া হলে প্রভাবিত হতে পারে তদন্ত।’’
শুনানির পর শেষমেশ সিবিআইয়ের আবেদনেই সম্মতি দিয়ে সহগলের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। পাশাপাশিই তিনি জানান, জেল হেফাজতে থাকলেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে সিবিআই।