কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা প্রায় দু’কোটি টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনায় ইডি তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবমাল্য ঘোষ মামলাটি করেছেন। প্রাথমিক শুনানির পর মামলায় দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে যুক্ত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। ১৩ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। সে দিন পুলিশ-সহ অন্যান্য সংস্থাকে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত নথিপত্র পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি রাজ্যকে কেস ডায়েরি পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। শুনানিতে ইডির কেউ হাজির ছিলেন না। দু’সপ্তাহের মধ্যে মামলাকারীকে পরবর্তী শুনানির দিন ইডিকে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান শহরের বিসি রোডের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকা ভাঙিয়ে অন্যের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর জন্য চিঠি জমা পড়ে। তা নিয়ে সন্দেহ হয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। ব্যাঙ্কের তরফে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ধরনের কোনও চিঠি ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়নি বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই ব্যাঙ্কের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু হয়। টাকা ভাঙানোর বিষয়টি সামনে আসার পর টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে সেখানে কত টাকা জমা রয়েছে, তা জানতে চান। এরই মধ্যে শহরের জেলখানা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, সেখানে স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা ভাঙিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ২২ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার সুজিত কুমার চৌধুরী বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে আরও একটি মামলা রুজু হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মীকে গ্রেফতার করে। তাঁকে হেফাজতেও নেওয়া হয়। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের কর্মী ভক্ত মণ্ডল ও ঠিকাদার সুব্রত দাসের নাম টাকা হাপিস করার ঘটনায় সামনে আসে। সুব্রতের অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা পড়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। সেখান থেকে টাকা আরও বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। সুব্রতকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকেও হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তদন্তভার সিআইডির হাতে যায়। গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করেন ভক্ত। জামিনের আবেদনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী কমল দত্ত বলেন, ‘‘ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকেরা জড়িত। তাঁদের আড়াল করতে চুনোপুঁটিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাইছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত ছাড়া প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে না।’’
জামিনের আবেদন খারিজ করলেও তাঁর পর্যবেক্ষণে জেলা জজ সুজয় সেনগুপ্ত জানান, আবেদনকারীর আইনজীবীর দাবি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেফ কাস্টডিতে থাকা স্থায়ী আমানতের শংসাপত্র কী ভাবে ব্যাঙ্কে পৌঁছল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জেলা জজ। জেলা জজের পর্যবেক্ষণের পর বিষয়টি অন্য মাত্রা পায়। তড়িঘড়ি কেসের তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও সিআইডি এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। হাতিয়ে নেওয়া টাকাও উদ্ধার হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই সিআইডি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ সবের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবমাল্য ঘোষ ইডি তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছেন। ইডির পাশাপাশি ক্যাগকে দিয়েও অডিট করানোর দাবি করেছেন তিনি।