দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে একটি দেওয়ালে।
দলের প্রতীক ও প্রার্থীর নাম এঁকে ভোট দেওয়ার আর্জি। তার সঙ্গে কখনও কাজের খতিয়ান দিয়ে নিজেদের দাবিকে পোক্ত করার চেষ্টা অথবা ছড়া কেটে বিরোধী প্রার্থীকে কটাক্ষ। আগে ভোটের মরসুমে নানা রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন হত সাধারণত এই সব নিয়েই। কিন্তু বৈচিত্র্য এসেছে এ বার। কোথাও ছোটা ভীমের দলবল আবার কোথাও মোটু-পাতলু— কার্টুনের নানা চরিত্রের আদল ফুটে উঠছে রাজনৈতিক দেওয়াল লিখনে। শুধু কার্টুন নয়, এ বার প্রচার হচ্ছে এলএডি আলোতেও।
দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগে থেকেই বিভিন্ন দেওয়ালের দখল নিয়ে রেখেছিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রে বিদায়ী বিধায়ক অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হতেই রাতারাতি সেই সব দেওয়ালের অধিকাংশ ভরে যায়। তার দিন কয়েক পরেই আবার এই কেন্দ্রে দলের প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর নাম ঘোষণা করে সিপিএম। দু’এক জায়গায় তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লিখনও শুরু হয়। যদিও কয়েক দিনের টানাপড়েন শেষে এখন এই কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়েছেন সদ্য তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। এরই মধ্যে প্রার্থীদের নামে দেওয়াল লিখন চলেছে।
শহর ঘুরে দেখা যায়, বহু জায়গাতেই এমন কার্টুন এঁকে দেওয়াল লেখা হয়েছে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি সেন্টারের মৌলানা আজাদ এলাকায় দেখা গিয়েছে, দেওয়াল জুড়ে ছোটা ভীম, কালিয়া, ছুটকি, টুনটুন মাসি, গলু, মলু, রাজুর আদলে আঁকা ছবি। টুনটুন মাসি সামনে লাড্ডুর সম্ভার সাজিয়ে জোড়হাতে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের জয়গান গেয়ে ভোট দেওয়ার আর্জি জানাচ্ছেন। ‘সবুজ সাথী’র সাইকেলে সওয়ার হয়ে ছুটকি ব্যস্ত কন্যাশ্রীর প্রচারে। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা যায়, মোটু-পাতলুর পাতলুর হাতে দলের প্রতীক।
বিরোধী দলরে নেতাদের কার্টুন আঁকার প্রচলন আগেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয় নানা কার্টুন চরিত্রকে দেওয়াল লিখনে আনা হল কেন? তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের দাবি, গুরুগম্ভীর লড়াইয়ের বদলে ভোটের প্রচারেও খানিক মজা আনতে এই উদ্যোগ। তাঁদের আরও ব্যাখ্যা, এত দিন যে ধরনের দেওয়াল লিখন হত, সাধারণ ভোটারদের অনেকে হয়তো তা খেয়াল করতেন না। এখন এই ধরনের কার্টুন চরিত্র ছোটদের নজর কাড়ছে, তারা তা অভিভাবকদের দেখাচ্ছে। ফলে, প্রচার বাড়ছে। কাঁকসা ও দুর্গাপুরের কিছু এলাকায় এলইডি আলোতেও প্রচারের পন্থা নিয়েছে তৃণমূল। নানা উৎসবের সময়ে যেমন এলইডি আলোয় বিভিন্ন রকম মডেল দেখা যায়, তেমনই এ বার এই আলোর মাধ্যমে ভোট চেয়ে আবেদন করা হচ্ছে।
দুর্গাপুর শহরের তৃণমূল নেতা পরিমল অগস্তি বলেন, ‘‘নতুনত্ব সহজেই মানুষকে আকর্ষণ করে। সে জন্যই এমন উদ্যোগ।’’ তিনি জানান, দলের উচ্চ নেতৃত্বের তরফে এই ধরনের দেওয়াল লিখনের কোনও নির্দেশ আসেনি। নানা এলাকায় দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই তা করেছেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে তা জেনে অন্য সব এলাকাতেও কর্মীরা এ ভাবে দেওয়াল লিখছেন।’’
বিরোধীদের প্রচারে অবশ্য এমন নতুত্বের খোঁজ মিলছে না। দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘যত খারাপ জিনিস, তার তত বেশি বিজ্ঞাপন দিতে হয়। ভাল চরিত্র ব্যবহার করে তার মুখ দিয়ে নিজেদের কথা বলিয়ে নিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা করা হয়। তৃণমূল সেই রাস্তাই নিয়েছে।’’ তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও প্রচারের প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন বিপ্রেন্দুবাবু।
ছবি: বিকাশ মশান।