প্রতীকী ছবি।
‘সবুজ’ বাজিতে ছাড় দিয়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এই নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই, শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট সব ধরনের বাজি ফাটানো ও বিক্রি নিষিদ্ধ করল। এই নির্দেশের পরে মাথায় হাত জেলার আতশবাজি বিক্রেতাদের। তবে খুশি জেলাবাসীর একাংশ। তাঁরা জানান, এই নির্দেশ আরও আগে দেওয়া হলে ভাল হত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বই দোকান থেকে শুরু করে ছোট-বড় মিলিয়ে, জেলার অধিকাংশ দোকানেই কালীপুজো, দীপাবলি, ছটের সময়ে আতশবাজি বিক্রি হয়। অভিযোগ, দোকানগুলিতে সাজানো থাকে পটকা থেকে সব ধরনের নিষিদ্ধ বাজি। তবে এ দিন কোর্টের এই নির্দেশের পরে দুপুরে রানিগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল, কোনও দোকানের সামনে বাজি নেই। তবে আড়ালে সব বিক্রি হচ্ছে অভিযোগ স্থানীয়দের একাংশের। বিক্রেতারা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রানিগঞ্জের বড়কালী মন্দিরের পটকা বিক্রেতা অসিত সরকার জানান, কোর্টের নির্দেশ জানার পরে, প্রায় তিনশো কেজি আতশবাজি ফেরত পাঠিয়েছেন বারাণসীতে মহাজনের কাছে। দেবাশিস দাস নামে আর এক বিক্রেতার দাবি, “আমার কাছে যা আতশবাজি মজুত ছিল, কয়েক দিন আগেই সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে।” কুলটির সীতারামপুরের ব্যবসায়ী পিন্টু আগরওয়াল বলেন, “আমার কাছে ৫০০ কেজির মতো আতশবাজি ছিল। আমাদের রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই পাশের ঝাড়খণ্ডে সব বিক্রির জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।”
ক্ষতি প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর করোনার জন্য এমনিতেই বাজার মন্দা ছিল। এ বার তার থেকেও খারাপ হল। রানিগঞ্জের এমজি রোডের ব্যবসায়ী রানা পাল বলেন, “আমার কাছে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকার মালপত্র আছে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।” বিকেলে আসানসোলের পাক্কা বাজার ও বার্নপুর স্টেশন রোডের দোকানগুলি ছিল ক্রেতা শূন্য। স্টেশন রোডের বাজি বিক্রেতা সম্রাট আগরওয়াল, কমল আগরওয়ালেরা বলেন, “দুর্গাপুজোর আগে কোর্ট এই নির্দেশ বলবৎ করলে ভাল হত। তা হলে, এত মাল কিনে রাখতাম না।” কোর্টের এই নির্দেশে খুশি সাধারণ বাসিন্দাদের একাংশ। সন্দীপ দাস, অঙ্কিত মণ্ডলরা বলেন, “বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ আমরাও চাই না।
তবে আরও আগে এই নির্দেশ দিলে ভাল হত।” ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যাল বলেন, “খুব ভাল সিদ্ধান্ত। তবে কতটা কার্যকর হবে, তা জানি না। কারণ, ইতিমধ্যেই অনেকে বাজি কিনে ফেলেছেন। তাঁরা তো সেগুলি ফেলে দেবেন না। এই নির্দেশ আগে হলে, ভাল হত।” পরিবেশবিদ জয়া মিত্রের প্রতিক্রিয়া, “এমন নির্দেশ আগেও জারি হয়েছে। তাতে কাজ হয়েছে বলে, আমার জানা নেই। কারণ, শব্দবাজি ফাটলে থানায় অনেকে অভিযোগ জানান। তখন থানা থেকে অভিযোগকারীর নাম জানতে চাওয়া হয়। পরিচয় সামনে চলে এলে সমস্যা হতে পারে, এই ভয়ে অনেকে অভিযোগ করেনই না। ফলে, কাজের কাজ কিছু হয় না।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিসি (সেন্ট্রাল ২) তথাগত পাণ্ডে জানান, আদালতের নির্দেশ পুরোপুরি কার্যকর করা হবে।