কাটোয়ায় দাঁড়িয়ে বাস। —নিজস্ব চিত্র।
রায়না থানার খালেরপুলে বুধবার সকাল থেকেই বর্ধমান-আরামবাগ রোড অবরোধ করে চালকদের একটি সংগঠন। আটকে পড়ে আরামবাগগামী একটি দক্ষিণবঙ্গ পরিবহন নিগম বা এসবিএসটিসির বাস। অভিযোগ, অবরোধকারীরা ওই বাস চালককে নামিয়ে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে দেন। আবার হাতে গোলাপ ফুল ধরিয়ে মিষ্টিমুখও করানো হয়। অবরোধে তাঁকে জোর করে শামিলও করানো হয় বলেও অভিযোগ।
নদিয়ার বিরাহবাজার থেকে লঞ্চে কালনা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন আসববাড়ি মণ্ডল ও আমেনা মণ্ডল। দীর্ঘ অপেক্ষা করার পরেও বর্ধমানগামী বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “যা পরিস্থিতি তাতে কোনও রকমে কালনা আসতে পারলেও গন্তব্যস্থলে যেতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।”
কোনও ঘোষণা ছাড়াই বুধবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে অধিকাংশ বাসের চাকা গড়ায়নি। কেন্দ্রের প্রস্তাবিত আইনের বিরোধিতায় জাতীয় স্তরের চালকদের একটি সংগঠন পূর্ব বর্ধমানেও আন্দোলনে নামে। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডের সামনে অবরোধ হয়। বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়কের রায়নার খালেরপুলে সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে অবরোধ হয়। সেখানেই সরকারি বাসের এক চালককে জুতোর মালা পরানো হয় বলে অভিযোগ। বাসটি আটকেও রাখা হয়। ওই বাসের এক যাত্রী বলেন, “প্রকাশ্যে রাস্তায় যে ভাবে এক জন চালককে জুতোর মালা পরানো হল, তা সভ্য সমাজে ভাবা যায় না। ওই দৃশ্য দেখে সবাই কুঁকড়ে গিয়েছিল। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারেননি।” ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল। তিনি বলেন, “এটা কোনও ভাবেই মানা যায় না। ওই চালক আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবব।” তিনি জানান, এ দিন নিগম ৬০ থেকে ১০০টির মতো বাস বেশি রাস্তায় নামানো হয়।
চালকদের ধর্মঘটের জেরে যাত্রীরা রাস্তায় বাস না পেলেও এ দিন বিকালে বর্ধমান শহরে যুব তৃণমূলের মিছিলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে করে লোক আনতে দেখা গিয়েছে। বাসের ‘চাপে’ শহরে যানজটও বেধে যায়। ফলে, সকালের পরিস্থিতি সামলে বিকেলে যাঁরা পথে বাসের আশায় নেমেছিলেন, তাঁরাও ভোগান্তিতে পড়েন। জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি রাসবিহারী হালদার বলেন, “প্রায় ছ’শো বাসে করে লোক নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাদের অনুরোধে চালকেরা ধর্মঘট ছেড়ে বাস চালিয়েছেন। তাঁদেরকে সংগঠনের তরফে প্রণাম ও অভিনন্দন।”
মিনি বাস (টাউন সার্ভিস) চালকরাও এ দিন ধর্মঘটে শামিল হন। শহরে মিনি বাস না চলায় টোটো চালকদের রমরমা ছিল। যাত্রীদের অভিযোগ, যেমন খুশি ভাড়া নিয়েছেন টোটো চালকেরা। ফলে, অন্য দিনে যে রাস্তা ১০-২০ টাকায় যাওয়া যায়, তা যেতে ৫০ থেকে ৭০ টাকা অবদি খরচ করতে হয়। গুসকরায় আবার ধর্মঘটীদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বলে টোটো চালকদের একাংশের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, বাসস্ট্যান্ডে টোটো চলাচলেও বাধা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা বিল পাশ করায় মোদী সরকার। সেই বিলের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, ধাক্কা মেরে পালানোর ঘটনায় ন্যায় সংহিতার ১০৬/২ ধারায় ট্রাক ও বাণিজ্যিক গাড়ির চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা পরিবহণ সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে আশ্বাস দেন। তারপরে আন্দোলন ওঠে। পূর্ব বর্ধমানের বিক্ষোভ নিয়ে চালকদের একটি সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক রাম্বরি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চালকদের বোঝানো হচ্ছে। যাঁরা বুঝতে চাইছেন না তাঁদের জুতোর মালা, গোলাপ ফুল আর মিষ্টি দেওয়া হচ্ছে।” ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ বাবু বলেন, “এই আইন চালু হয়ে গেলে আমাদের পেশায় তো পরবর্তী প্রজন্ম আর আসবেই না।”
তবে কিছু বাস চলেছে। আইএনটিটিউসির কালনা ১ ব্লকের সভাপতি রঞ্জিত সেন বলেন, “ধর্মঘট নিয়ে কোনও প্রচার করেননি চালকেরা। আগাম কিছু জানা ছিল না। বাড়তি বাস দিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে।” গলসির বাসিন্দা অরুন সোম, শাহাদত হোসেনরা বলেন, “আচমকা ধর্মঘট করার আগে যাত্রীদের কথা চালকদের ভাবা
উচিত ছিল।”