বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।
পরীক্ষার সাত মাসের মাথায় ফল বেরনো শেষ হল পার্ট ২-এর। মঙ্গলবার রাতে কলা বিভাগের ফল প্রকাশিত হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক দফতর সূত্রে জানা যায়, কলা বিভাগে পার্ট ২-এ অনার্সের পড়ুয়া ছিলেন ১৮ হাজার ৪১৫ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০,২৯৬ জন (৫৫.৯৬%)। পাস কোর্সে উত্তীর্ণ হওয়ার হার বেশ কম, ২২.৩% শতাংশ। জানা গিয়েছে, ২৬ হাজার ৯৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র ৬০২১ জন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে ফল প্রকাশে দেরির কারণে কন্ট্রোলার ও এক শীর্ষ কর্তা প্রদীপ রায়কে শো-কজের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। নতুন ভাবে ওই দায়িত্ব পেলেন কৃষ্ণেন্দু মজুমদার। আর প্রদীপবাবুকে সরিয়ে গোলাপবাগে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বছরের পর বছর ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ-অভিযোগ, সরকারের নানা স্তর থেকে বার্তা আসার পরেও দেরিতে ফলপ্রকাশের ঐতিহ্য বদলায়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বার ফল বার হওয়ার আগেই মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পার্ট ৩-এর পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবাদ জানান পড়ুয়ারা। শেষমেশ ঠিক হয়, এপ্রিলের গোড়ায় পরীক্ষা হবে। তবে ভোট ঘোষণা হওয়ার পরেই পরীক্ষার নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি। ফল প্রকাশে দেরিরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কর্তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের গাফিলতির জন্যে কয়েক মাস ধরে ‘এপি সেকশনে’ খাতা পড়েছিল। পরীক্ষকেরা খাতা নিতে চাইছেন না বলে ওই বিবভাগ থেকে পরীক্ষা নিয়ামককে চিঠি করা হলেও তিনি ‘গুরুত্ব’ দেননি। পরে উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার হস্তক্ষেপ করেন। কিন্তু তত দিনে অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের এক কর্তার কথায়, “উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার কার্যত অনুনয়-বিনয় করে শিক্ষকদের খাতা দেখতে বলেন। খাতা নিয়ে যাওয়ার পরেও অনেকে নির্দিষ্ট সময়ে খাতা ফেরত দিচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাড়িতে করে, স্কুটারে করে খাতা নিয়ে আসতে হয়েছে।’’ খাতার মূল্যায়নের পরে নির্দিষ্ট নম্বর অনুযায়ী মার্কশিট প্রস্তুতকারক সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও সপ্তাহ খানেক দেরি হয়েছে বলে পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের দাবি।
প্রশ্ন উঠছে, কলা বিভাগের পার্ট ২-এর পাস কোর্সের ফল নিয়েও। পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের ব্যাখা, পাস কোর্সের একটা বড় অংশের পড়ুয়া বিভিন্ন কাজে যুক্ত। অনেকে ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় লেখাপড়ায় জোর দিতে পারেন না। সব মিলিয়ে পরীক্ষার সময় তোড়জোর শুরু করলেও শেষ রক্ষা হয় না। যদিও এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরির প্রশ্ন, “শেষ মূহুর্তে তাড়াহুড়ো করে খাতা দেখতে গিয়ে সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে কি?” টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি মহম্মদ সাদ্দাম হোসেনও বলেন, “পরীক্ষার্থীরা যাতে পুনর্মূল্যায়ন পায়, তার দাবি জানানো হচ্ছে।’’
এ দিন ফল বার হওয়ার পরে একটা বিভ্রান্তিও দেখা যায়। রেজাল্টে দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ অনার্সে ২০৮, ২১১ নম্বর পেয়েছেন। ২০০র মধ্যে পরীক্ষায় তার বেশি কী ভাবে পাওয়া সম্ভব! পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের অবশ্য ব্যাখা, ‘১৫এএইচ’ নম্বর দিয়ে যাঁদের রোল, তাঁদের পার্ট ১ ও পার্ট ২-এর পূর্ণমান (২০০+২০০) ধরে একত্রে ফল প্রকাশ করা হয়েছে (পুরনো নিয়ম অনুসারে)। ‘১৬এএইচ’ দিয়ে যাঁদের রোল নম্বর নতুন নিয়মে তাঁদের ফল প্রকাশিত হয়েছে।