জেলা কৃষি খামারে বসেছে সোলার পাম্প। নিজস্ব চিত্র
বোরো চাষের প্রশিক্ষণের জন্য এক টাকাও খরচ করতে পারেনি জেলা কৃষি দফতর। তেমনি মাটি পরীক্ষা, মডেল গ্রাম তৈরির কাজও এগোয়নি। শুক্রবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের হাতে এমনই রিপোর্ট তুলে দিল জেলা কৃষি দফতর। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা স্তরের একটি বৈঠকে জেলাশাসক বিজয় ভারতীকেও ওই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
রিপোর্ট হাতে নিয়ে প্রদীপবাবু বলেন, “কোথায়, কী ঘাটতি রয়েছে, কোথায় উদ্বৃত্ত রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হয়েছে। উদ্বৃত্ত টাকা রাজ্য সরকারের কোষাগারে ফেরত দিতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কৃষিক্ষেত্রে পূর্ব বর্ধমান সব সময়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই জেলায় কিছু ক্ষতি হলে, তার প্রভাব সারা রাজ্যেই পড়ে। সে জন্য জেলার সব আধিকারিকদের নিয়ে প্রকল্পগুলি কী ভাবে চলতি আর্থিক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে, তার বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’’
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জেলাশাসক প্রতিদিন বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “রিপোর্ট তৈরির পরে আরও কাজের অগ্রগতি হয়েছে। এ ছাড়া, বেশ কিছু প্রকল্পের টাকা গত সপ্তাহে পাওয়া গিয়েছে। চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’
ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, খরিফ মরসুমে প্রদর্শনী ক্ষেত্রের জন্য পূর্ব বর্ধমান প্রায় ৯৯ শতাংশ টাকা খরচ করে ফেললেও বোরোর জন্য প্রাপ্ত এক কোটি ১৮ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। যদিও কৃষি দফতরের দাবি, ওই টাকা গত সপ্তাহেই জেলায় এসেছে। আবার ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’ (আরকেভিওয়াই) প্রকল্পের মধ্যে বীজ শোধনের জন্য চাষিদের সচেতন করতে একশো শতাংশ সফল হয়েছে কৃষি দফতর। কিন্তু বাকি তিনটে স্তরে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে। কৃষি দফতর জানিয়েছে, গাড়ির খরচের ১৮,৮৩,০০০ টাকা চলতি আর্থিক বছরে মিলেছিল। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। এক মাসে বাকি টাকা খরচ কৃষি দফতর করতে পারবে না। অন্তত পাঁচ শতাংশ টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
মাটির স্বাস্থ্য-কার্ড প্রকল্পের মধ্যে মাটির নমুনা সংগ্রহ করাতে জেলা পিছিয়ে রয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে জেলা পেয়েছে ১৪,৫১,০০০ টাকা। খরচ হয়েছে মাত্র সাড়ে ২৯%। কৃষি দফতর জানিয়েছে, এ বছর ওই টাকা মিললে মার্চের মধ্যে নমুনা সংগ্রহের কাজ শেষ করা যাবে। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় মডেল গ্রাম তৈরির জন্য প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা পেয়েছে জেলা কৃষি দফতর। কিন্তু নানা কারণে তা খরচ করা যায়নি। ‘জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন’-এ (এনএফএসএম) তৈলবীজ উৎপাদনেও পিছিয়ে রয়েছে জেলা। সেপ্টেম্বরে টাকা পেলেও ডাল উৎপাদনে মাত্র ২% টাকা খরচ হয়েছে। যদিও কৃষি দফতরের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচের শংসাপত্র জমা পড়ে যাবে। তবে পাট উন্নীতকরণ প্রকল্প (এইজেডিপি), ‘জ়িরো টিলেজ’ প্রযুক্তি ব্যবহার, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে মৃত চাষিদের সাহায্য-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে জেলা ৯৫ শতাংশের বেশি টাকা খরচ করতে পেরেছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। আবার চাষিদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে জেলা।
কৃষকসভার জেলা সভাপতি উদয় সরকারের কটাক্ষ, ‘‘যে কাজে কমিশন নেই সেখানে উৎসাহ নেই এদের। কৃষকদের কথা ভাবা হয় না।’’ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (কৃষি) মহম্মদ ইসমাইল অবশ্য বলেন, “পরিস্থিতি আরও বাজে ছিল। চিৎকার-চেঁচামেচি করায় চাষিদের ভর্তুকি দেওয়া কিছুটা এগিয়েছে।’’