Kalna Super Speciality Hospital

ভাঙা পাঁচিল, অবাধ যাতায়াত বহিরাগতদের 

দিন-রাত ভিড় উপচে পড়ে জেলা, ভিন্‌ জেলার রোগীদের। সেই সরকারি হাসপাতালে কতটা নিরাপদ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা? আজ কালনা হাসপাতাল।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৪
Share:

পাঁচিলের হাল। নিজস্ব চিত্র।

কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রয়েছে প্রসূতি বিভাগ। সেখানে প্রসবের পরে কোন শিশু অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে নিয়ে নার্স এবং মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটতে প্রায় ২০০ মিটার দূরে মহকুমা হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে। মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, রাতে এমন দায়িত্ব মাঝেমধ্যেই পালন করতে হয়। সে ক্ষেত্রে দুই হাসপাতালের মধ্যে যাতায়াতের সময় মেলে না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বড় এলাকা নিয়ে দুই হাসপাতাল তৈরি হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে বেশ কিছু গলদ।

Advertisement

বর্ধমান, নদিয়া এবং হুগলি জেলার একাংশের মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেয় কাছাকাছি থাকা এই দুই হাসপাতাল। মহকুমা হাসপাতালের ভিতরে রয়েছে একটি পুলিশ ক্যাম্প। দুই হাসপাতালের বিভিন্ন এলাকায় পালা করে নজরদারি চালানোর জন্য রয়েছেন ২২ জন সিভিক ভলান্টিয়ার, এক জন এএসআই এবং তিন জন মহিলা কনস্টেবল। হাসপাতালের নিজস্ব রক্ষী রয়েছেন ৩৬ জন। দু’টি হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে নজরদারির জন্য রয়েছে ৩২টি করে নজরদারি ক্যামেরা।

এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার জন্য রয়েছে পায়ে হাঁটা পথ। মহকুমা হাসপাতালের প্রথম ফটক দিয়ে রোগীদের হাসপাতালের ভিতর ঢোকানো হয়। বাকি দু’টি দরজা দিনরাত খোলা থাকে। এর মধ্যে মর্গে ঢোকার দরজাটি ভাঙাচোরা। অভিযোগ, হাসপাতালে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দরজা দিয়ে হামেশাই যাতায়াত করতে দেখা যায় নেশায় আসক্ত যুবকদের। মর্গ থেকে কিছু দূরে রেল লাইনের গা ঘেঁষে হাসপাতালের পাঁচিলের একাংশ আবার ভাঙা। ওই অংশ দিয়ে অনায়াসে বাইরের লোক ঢুকে পড়েন হাসপাতাল চত্বরে।

Advertisement

১৯৯৪-এ হাসপাতালের ভিতরে খুন হন নকশাল নেতা হালিম শেখ। তাঁকে গুলি করে এবং কুপিয়ে খুন করে এক দল দুষ্কৃতী। সে সময়ে নিহত নকশাল নেতার খুব কাছে থাকা কালনা শহরের বাসিন্দা মনোরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘বেশ মনে আছে, রাত ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছিল। দুষ্কৃতীরা কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। ওই ঘটনার পরে হাসপাতালের ভিতরে পুলিশ ক্যাম্প বসে। তবে এখনও কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তা যথেষ্ট পোক্ত নয়।’’

রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের একাংশের দাবি, হাতে গোনা কয়েক জন পুলিশকর্মী থাকেন নিরাপত্তায়। প্রয়োজন না থাকলেও অনেকে ঢুকে পড়েন ওয়ার্ডে। নিরাপত্তার গাফিলতি রয়েছে। বড় ঘটনা এই হাসপাতালেও ঘটতে পারে। এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সঙ্গে এসএনসিইউ বিভাগ থাকলে ভাল হত। রাতে সুপার স্পেশালিটিতে সদ্যোজাত অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে যেতে হয় মহকুমা হাসপাতালে থাকা ওই বিভাগে। সে সময়ে মেলে না পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।’’

রোগীর পরিবারের সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, সুপার স্পেশালিটি সামনে জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারদের অনেকেই ব্যস্ত থাকেন মোবাইলে। হাতে গোনা কয়েক জন পুলিশ কর্মীর পক্ষে দু’টি হাসপাতালের সব দিকে নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। নজরদারির অভাবে মাঝে মধ্যে হাসপাতালে চত্বর থেকে চুরি যায় মোবাইল, সাইকেল-সহ অনেক কিছু। সম্প্রতি হাসপাতাল চত্বর থেকে স্ট্রেচারে করে এক রোগীকে বিপজ্জনক ভাবে এসটিকেকে রোড ধরে প্যাথলজি সেন্টারে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছিল তাঁর আত্মীয়কে। অভিযোগ, হাসপাতালে রয়েছে দালালদের উৎপাতও।

হাসপাতালের সহকারী সুপার সামিম শেখ জানিয়েছেন, হাসপাতালের পাঁচিলের ভাঙা অংশ দ্রুত ইট দিয়ে বুজিয়ে দেওয়ার জন্য পূর্ত দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১৭ অগস্ট হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক হবে।সেখানে কয়েক দফা বিষয়ের সঙ্গে আলোচনা হবে মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement