কালনার বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মারামারি। নিজস্ব চিত্র।
প্রকাশ্যে রাস্তায় বাঁশ, লাঠি, দলীয় পতাকা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠল বিজেপির দুই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সোমবার বিকেলে এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক বিজেপি কর্মী।
আহত অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী কমলা বিশ্বাস জেলা বিজেপির কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি (কাটোয়া) গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, তৃণমূলের মদতেই এ সব হচ্ছে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চিত উপভোক্তাদের অধিকারের দাবিতে এবং রাজ্যে তৃণমূলের নানা দুর্নীতির প্রতিবাদে মিছিলের ডাক দেয় বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা। নিভুজিবাজার থেকে বৈদ্যপুর মোড় পর্যন্ত কিলোমিটার দুয়েক এলাকা জুড়ে মিছিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিছিল শুরুর আগেই নিভুজি মোড়ের কিছুটা দূরে একটি কাঠগোলার সামনে শ’দেড়েক বিজেপি নেতা-কর্মী জড়ো হন। এসটিকেকে রোডে শুরু হয়ে যায় মারামারি। দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বাঁশ, লাঠির আঘাতে কয়েক জন জখম হন। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। দু’টি গোষ্ঠীকে বেশ কিছুটা দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিকেল ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ পুলিশের নিরাপত্তায় শুরু হয় মিছিল। তবে কাঠগোলার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘জেলা সভাপতি হটাও’ স্লোগান দিতে শোনা যায় ‘বিক্ষুদ্ধদের’।
সম্প্রতি কালনার কৃষ্ণদেবপুরের একটি লজে বিজেপির একটি ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠী অনুপম হাজরাকে এনে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করে। ওই লজ থেকে কিছুটা দূরেই এ দিন অশান্তি বাধে। ‘বিক্ষুদ্ধদের’ তরফে হাটকালনা পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ মণ্ডলের দাবি, ‘‘মিছিলে বাইরে থেকে লোক আনা হয়। অথচ, হাটকালনা এবং কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত ছয় পঞ্চায়েত সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’’
তাঁর দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিলে যোগ দিতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আচমকা হামলা হয়। পুরনো কর্মীদের সম্মান না দেওয়ায় দলে ক্ষোভ বাড়ছে বলেও দাবি করেন তাঁরা। তৃণমূলের সঙ্গে নেতাদের অনেকে যোগাযোগ রেখে চলেন বলেও অভিযোগ তাঁর। বিকেল ৫টা নাগাদ বৈদ্যপুর মোড়ে শেষ হয় মিছিল। জেলা সভাপতিকে নিভুজিবাজার পেরিয়ে মিছিলে যোগ দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘‘তেরোশো লোক নিয়ে মিছিলের আয়োজন হয়েছিল। কিছু দিন আগে লজে যাঁরা বৈঠক করেছিলেন, তাঁদেরই একাংশ মিছিল পণ্ড করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁরাই হামলা চালান। দলীয় কর্মীরা প্রতিরোধ করেন। তবে মিছিল আটকাতে পারেনি।’’
ছয় পঞ্চায়েত সদস্যকে না ডাকা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সবাইকেই ডাকা হয়েছে। অনেক জয়ী প্রার্থীরা হেঁটেছেন। পুরো ঘটনায় তৃণমূলের মদত রয়েছে।’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের পাল্টা দাবি, ‘‘এখনও ওরা ক্ষমতায় আসেনি। তার আগেই নিজেদের মধ্যে প্রকাশ্যে মারামারি করছে। ক্ষমতায় কোনও ভাবে এলে কী করবে, তা ভেবেই অনেকে আতঙ্কিত!’’