বিজেপির সভাস্থলে চেয়ার উল্টে দিলেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। রবিবার দুর্গাপুরের গাঁধী মোড় ময়দানে। ছবি: বিকাশ মশান
দলের চিন্তন বৈঠকের দ্বিতীয় তথা শেষ দিনে দুর্গাপুরে বিজেপির অন্তর্কলহের ছবি প্রকাশ্যে এল বারবার। যে হোটেলে বৈঠক চলছিল, সকালে তার বাইরে বিজেপির পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন। বিকেলে আবার গাঁধী মোড় ময়দানে সভাস্থলে দলে নতুন কর্মীকে নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলে ক্ষোভ জানাতে থাকেন কিছু বিজেপি কর্মী। চেয়ার উল্টে দেওয়া হয়, বাঁশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টাও হয়। যদিও এই ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিতে চাননি বিজেপি নেতারা।
সিটি সেন্টারের একটি হোটেলে শনিবার শুরু হয় বিজেপির দু’দিনের চিন্তন বৈঠক। রবিবার দুপুরে বিজেপির পতাকা হাতে কয়েকজন হোটেলের সামনে হাজির হয়ে দলের জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা ভিতরে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু দলের কর্মীদের একাংশ তাঁদের আটকে দেন। বিক্ষোভকারীদের তরফে পিন্টু সেন অভিযোগ করেন, ‘‘দলের জেলা সভাপতি আগে ডেকরেটরের ব্যবসা করতেন। কী ভাবে তাঁর এত বড় বাড়ি হল? কোথা থেকে আসছে এত অর্থ?’’ তাঁর দাবি, প্রায় ৩০ বছর দলে থাকলেও তিনি গুরুত্ব পান না। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘কর্মীরা মার খাচ্ছেন, আর জেলা সভাপতি অর্থের বিনিময়ে হোটেল মালিক, ব্যবসায়ী, প্রমোটারদের দলে নিচ্ছেন। আমরা অনেক কিছু জানি বলে দল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে।’’ লক্ষ্মণবাবুর অপসারণ চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা সভাপতি লক্ষ্মণবাবুর পাল্টা দাবি, পিন্টুবাবুকে বিজেপি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। এখন বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের নামে দলের বদনাম করার চেষ্টা করছেন তিনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুধু বলেন, ‘‘দলের কর্মী-সমর্থকেরা অনুশাসন মেনে চলেন। অনুশাসন যাঁরা মানেন না, দলে তাঁদের জায়গা নেই।’’
এ দিন বিকেলে গাঁধী মোড় ময়দানে জনসভাতেও বিতর্ক তৈরি হয়। বারাবনির তৃণমূল বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের জেঠতুতো ভাই মলয় উপাধ্যায় ওই সভায় বিজেপিতে যোগ দেন। প্রতিবাদে দলের একাংশ তীব্র ক্ষোভ জানাতে থাকেন। সভাস্থলে বেশ কিছু চেয়ার উল্টে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, মলয়বাবু তৃণমূলের কর্মী থাকাকালীন তাঁর হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির কর্মীরা। বেআইনি কয়লা, লোহা, বালির কারবারেও তিনি জড়িত। এমন কাউকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা বরদাস্ত করবেন না বলে দাবি করেন। নিজেকে বিজেপি কর্মী পরিচয় দিয়ে বাপ্পা মাজি এক জনের অভিযোগ, ‘‘মলয়বাবু তৃণমূলে থাকাকালীন আমরা তাঁর ও তাঁর সঙ্গীদের হাতে মার খেয়েছি।’’ কিছুক্ষণের মধ্যেই সভা শেষ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি বেশি জটিল হয়নি।
বিধায়ক বিধানবাবু অবশ্য দাবি করেন, মলয়বাবু কোনও দিনই তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন না। তিনি বলেন, ‘‘দলের নাম ভাঙিয়ে নানা কারবার করার চেষ্টা করেছে। আমরা আমল দিইনি।’’ মলয়বাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘদিন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী ছিলাম। সিপিএম আমার নামে মামলা করেছিল। তবে কোনও বেআইনি কারবার আমি করি না। ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিয়ম মেনে কয়লার ব্যবসা করতাম।’’ বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘দলে ঢোকার পরে যাচাই করে নেওয়া হয় সবাইকে। যাঁরা যোগ্য তাঁরা টিকে যান। বাকিদের সরে যেতে হয়। তাই কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ রয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’ তৃণমূল সভায় লোক ঢুকিয়ে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘চিন্তন শিবির নয়, বিজেপির দুশ্চিন্তার শিবির হয়ে গেল। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল করেছে। মুখ লুকোতে তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছে।’’