সুকান্ত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।
পুলিশ ও প্রশাসনের উপর আর ভরসা না করে মারের বদলা পাল্টা মারের কথা প্রায়শই শোনা যায় বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মুখে। দলের রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন পুলিশকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জন্য মামলাও হয়েছে। তবে বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদারকে তাঁর পূর্বসূরির মতো এমন ‘গরমাগরম’ মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় দলীয় জনসভা থেকে সেটাই করলেন তিনি। দিলীপের ভঙ্গিমায় তৃণমূলকে মারের নিদান দিলেন তিনি। আবার দলীয় কর্মীদের সাহস জুগিয়ে বললেন, ‘‘আপনাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলে আমরা হাই কোর্ট থেকে জামিনের ব্যবস্থা করব। প্রয়োজন হলে সুপ্রিম কোর্টেও লড়ব।’’ আর তার পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। তৃণমূল নেতৃত্বের কটাক্ষ, বিজেপির কোনও জনভিত্তি নেই। তাই এ সব বলে নজরে আসতে চাইছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি।
সভা থেকে ধমকের সুরে সুকান্ত বলেন, “তৃণমূলের গুন্ডাদের বলে যাচ্ছি, আমি মাস্টারমশাই। অনেক বেয়াদব ছাত্রকে সোজা করেছি। আমি প্রাইমারি থেকে ইউনিভার্সিটি (বিশ্ববিদ্যালয়) অবধি পড়িয়েছি । তোমাদের মতো গুন্ডাদের মাটির ১০০ ফুট নীচে কী ভাবে পুঁতে দিতে হয়, সেটা সুকান্ত মজুমদারের জানা আছে।’’ শাসকদলকে নিশানা করে তাঁর সংযোজন, ‘‘পার্টি করছেন করুন। চুরি করছেন করুন। কিন্তু বিজেপি কর্মীদের গায়ে হাত দিলে তার হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা সুকান্ত মজুমদারের আছে।’’
কাটোয়ার জনসভা থেকে তৃণমূল বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকেও আক্রমণ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের জেলায় তো চোরের অভাব নেই, সব বড় বড় চোর। এখানে কাটমানি, সিন্ডিকেটের সম্রাট রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি কংগ্রেসে ছিলেন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে গেলেন। এখন কী করবেন? কংগ্রেসের পাপ্পু আর তৃণমূলের আপ্পু তো জোট করছে। দিল্লির পাপ্পু হলেন রাহুল গান্ধী। আর বাংলার আপ্পু হল কয়লা ভাইপো। এখন রবীন্দ্রনাথবাবু কী করবেন, কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। শুনলাম কলকাতাতেও নাকি বাড়ি কিনেছেন।’’ তার পর স্বপন দেবনাথকে নিশানা করে সুকান্ত বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক একটা বিধায়ক বড় বড় চোর। শিক্ষিত ছেলেরা বেকার হয়ে বসে আছে। আর পূর্বস্থলীর দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন দেবনাথের ছেলে চাকরি পেয়ে গিয়েছেন। উনি নাকি এক সময় হাফ প্যান্ট পরে সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন।’’
সুকান্তের এই বক্তব্যের পর স্বপন এবং রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ফোন ধরেননি। তবে এ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির পক্ষে কোনও মানুষ নেই। রাজ্যের মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে আছে। আর বিজেপির সঙ্গে আছে গুন্ডারা। সেই গুন্ডাদের নিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাতে লাভ কিচ্ছু হবে না।’’