সাংসদ, বিধায়কের দাবিতে বিতর্ক
BJP Leader Durgapur

ভূমি-পুজোর কথা অজানা দুই নেতার

ডিএসপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন ব্লাস্ট ফার্নেস গড়া-সহ বেশ কিছু বিভাগের আধুনিকীকরণ ও অন্য কাজ হবে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৫
Share:

দুর্গাপুরে সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও লক্ষ্মণ ঘোড়ুই। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর

Advertisement

ফাঁকা জমিতে ভূমি-পুজো করতে গিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি)। তার পরেই, উচ্ছেদ নোটিস পাওয়া তামলা বস্তির বাসিন্দাদের পুনর্বাসন-বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় দুর্গাপুরে। এর পরেই, সিপিএম ও তৃণমূল দাবি করেছিল, এলাকার সাংসদ ও বিধায়ক বিজেপির। ফলে, তাঁরা যথেষ্ট তোড়জোড় করলে এই হাল হত না। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে, শুক্রবার সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ও বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, দু’জনেই দাবি করলেন, তাঁরা বিষয়টি জানতেন না! এর ফলে, আদতে তাঁরা ডিএসপি-কেই ঘটনার জন্য দায়ী করলেন বলে পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করছে বিরোধীরা।

Advertisement

সাংসদ দাবি করেছেন, “কাউকে না জানিয়ে কাজ করতে গিয়েই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে। আমি সাংসদ। আমার সঙ্গে এক বার কথা বলা কী দরকার ছিল না!” দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইও দাবি করেন, “আমিও কিছু জানতাম না।”

ডিএসপির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন ব্লাস্ট ফার্নেস গড়া-সহ বেশ কিছু বিভাগের আধুনিকীকরণ ও অন্য কাজ হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৬ সালে ও দ্বিতীয় তথা শেষ পর্যায়ের কাজ ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। সে জন্যই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার ‘জবরদখলকারীদের’ উচ্ছেদ-নোটিস দিয়েছে ডিএসপি। বৃহস্পতিবার তামলা বস্তির একটি ফাঁকা জায়গায় ডিএসপি ভূমি-পুজো করতে গেলে, বিপত্তি বাধে। বিক্ষোভকারীদের একাংশ দাবি করেন, সিআইএসএফ লাঠি চালিয়েছে। যদিও, সিআইএসএফ
তা মানেনি।

শুক্রবার সে প্রসঙ্গ তুলে বিজেপি নেতৃত্বকে বিঁধছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের বিষয়। সিআইএসএফ-কে লাঠি চালানোর অধিকার কে দিয়েছে? এখন বিজেপির সাংসদ, বিধায়ক বলছেন কিছুই জানেন না! এটা ঠিক নয়।” সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীও বলেন, “সেলের নিজস্ব পুনর্বাসন প্যাকেজ আছে। তা হলে কেন এই অশান্তি হবে? কারখানার বাইরে সিআইএসএফ-এর লাঠি চালানোর কোনও অধিকার নেই।”

এ দিন সুরেন্দ্র এই প্রসঙ্গেই দাবি করেন, যে জায়গা ঘিরতে গিয়েছিলেন ডিএসপির আধিকারিকেরা, তা কারখানা লাগোয়া ফাঁকা জায়গা। পরক্ষণেই তাঁর সংযোজন: “সবাইকে জানিয়ে করলে হয়তো এমনটা হত না।” পাশাপাশি, পুনর্বাসনের জন্য এ দিন ফের তিনি সওয়াল করেন।

এলাকার বিজেপি সাংসদ ও বিধায়ককে বিষয়টি না জানানোর বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। তবে, কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ফাঁকা জায়গা যাতে নতুন করে দখল না হয়, সে জন্য কারখানা সংলগ্ন ১,২৫০ একর জায়গা পাঁচিল ও বেড়া দিয়ে ঘেরার তোড়জোড় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সে জন্য ৫ নম্বর গেটের কাছে গোপালমাঠে এবং ২ নম্বর গেটের কাছে সূর্য সেন সরণির পাশে ভূমি-পুজোর আয়োজন করা হয়।

ডিএসপির মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় দাবি করেন, প্রায় তিনশো জন সেখানে হাজির হয়ে বাধা দিতে থাকেন। কোনও রকমে ডিরেক্টর ইনচার্জ ভূমি-পুজো সেরে গাড়িতে ওঠার সময় তাঁর গাড়ির সামনে গাছ ফেলে রাস্তা আটকে দেওয়া হয়। তাঁর গাড়ি তাক করে ইট ছোড়া হয়। তবে তাঁর সংযোজন: “ডিরেক্টর ইনচার্জকে বাঁচাতে সিআইএসএফ অত্যন্ত পেশাদারি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। যে সব জমি মাফিয়া ডিএসপির জমি দখল করে বিক্রি করার কাজে লিপ্ত, তারাই বিক্ষোভকারীদের সেখানে নিয়ে গিয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। পাঁচিল দেওয়ার কাজ শেষ করতে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতা
চাইছে ডিএসপি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement