আসানসোল পুরসভার কুলটি বরো কার্যালয়ে। ছবি: পাপন চৌধুরী
১৫ দিনের মধ্যে জল-সমস্যা না মিটলে চেয়ার থেকে সরিয়ে দেব— কার্যত এই ভাষাতেই আসানসোল পুরসভার এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ অধিকারীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী বিজেপির চৈতালি তিওয়ারির বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে সরবহয়েছেন পুর-কর্তারা।
কুলটির বিস্তীর্ণ এলাকায় জলসঙ্কট দেখা দিয়েছে, এই অভিযোগে শনিবার আসানসোল পুরসভার কুলটি বরো কার্যালয়ে বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিজেপি। নেতৃত্বে ছিলেন পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী চৈতালি তিওয়ারি এবং কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানেই চৈতালির সঙ্গে কথা বলেন বরোর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের একাংশের দাবি, আচমকা চৈতালি রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে অভিজিতকে বলেন, “১৫ দিনের মধ্যে জল সমস্যা মেটান। তা না হলে, কিন্তু চেয়ার থেকে সরিয়ে দেব।” এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলে। পরে, অভিজিতের হাতেই স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু এর পরে, চৈতালির ‘এক্তিয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। পুরসভার মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের বক্তব্য, “হুমকি ও ধমক দেওয়াটাই বিজেপির সংস্কৃতি। বিরোধী দলনেত্রী সে সংস্কৃতি অনুযায়ী কথা বলেছেন। ইচ্ছে হলেই উনি বা আমি, কেউই কাউকে চাকরি থেকে বসিয়ে দিতে পারি না।” অভিজিতের প্রতিক্রিয়া, “এ ধরনের কথাবার্তায় কিছু যায়-আসে না।” বিষয়টি নিয়ে পরে মুখ খুলতে চাননি চৈতালি। তবে বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র প্রতিক্রিয়া, “কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে এ ধরনের কোনও মন্তব্য করা হলে, আমরা বিরোধী দলনেত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
এ দিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল পুরসভার ৬৩ থেকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা, যেমন, পাথরখাদ, কেন্দুয়া বাজার, জনকপুরা, লোকোপাড়, বালতোড়িয়া প্রভৃতি স্থানে দেখা যায়, কলতলায় বালতি হাঁড়ি, ডেকচি হাতে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, নিত্য দিন দু’বালতি পানীয় জলের জন্য কম পক্ষে তিন কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। আবার পুরসভার ১০০ থেকে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের চিনাকুড়ি, চিনাকুড়ি বাজার, নয়-দশ নম্বর নোনিয়াপাড়া, আসনবনি, সিপিসি প্ল্যান্ট-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা যায়, সাইকেলের দু’দিকে বড় জলের জেরিক্যান ঝুলিয়ে পানীয় জল বয়ে আনছেন বাসিন্দারা।
পাশাপাশি, কুলটির বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বছর চারেক আগে প্রায় ২২৯ কোটি টাকা খরচ করে কুলটিতে নতুন জলপ্রকল্প তৈরির পরেও সমস্যা মেটেনি। চৈতালির অভিযোগ, “পরিকল্পনার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টা জল দেওয়া হবে। কিন্তু যাঁরা সংযোগ পেয়েছেন, তাঁরাও দিনে এক ঘণ্টার বেশি জল পাচ্ছেন না।” দ্রুত পানীয় জলের সমস্যা মেটানো এবং প্রতিটি পরিবারে জল-সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিধায়ক অজয়। তবে মেয়র বিধানের দাবি, “কুলটির ৩৯ হাজার পরিবার গৃহ-সংযোগ পেয়েছে। আরও সাড়ে সাত হাজার পরিবারকে গৃহ-সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। বিরোধীদের কাজই হলসমলোচনা করা।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।