আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। —নিজস্ব চিত্র।
আসানসোলের সমস্যা মেটাতে তথা এ শহরের উন্নয়নে সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে। সে জন্য একটি ‘মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোর দাবি তুললেন আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তথা বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাঁর প্রস্তাব, এ পরিকল্পনার রূপায়ণে দলমত নির্বিশেষে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন সাংসদ, বিধায়কেরা।
মঙ্গলবার জিতেনের এ দাবি ঘিরে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন শিল্পনগরীর রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যদিও তা অস্বীকার করেছেন জিতেন। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, চলতি বছরের শেষে আসন্ন পুরভোট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, মঙ্গলবার আসানসোলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। ফলে এই কেন্দ্রেও উপনির্বাচন করাতে হবে। তবে কি আসানসোল মাস্টার প্ল্যানের দাবি তুলে পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করলেন জিতেন?
ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার বাবুলের ইস্তফার আগেই এ দাবি তোলেন বিজেপি নেতা জিতেন। আসানসোলে নিজের বাড়িতে তাঁর দলের প্রাক্তন কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘আসানসোল, কুলটি, বার্নপুর, জামুরিয়া, রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর বা বারাবনি— কোনও শহরই পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠেনি। ফলে এই শহরগুলির নানা সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পূর্ত-সহ সমস্ত দফতরকে সঙ্গে নিয়ে আসানসোলের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রাজ্য সরকারকে পাঠানোর প্রস্তাব করেছি। যাতে সরকার তা অনুমোদন করে। এ নিয়ে সাংসদ-বিধায়কদেও চিঠি লিখে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ এ বিষয়ে সব দলকেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করেন জিতেন। তিনি বলেন, ‘‘শাসকদলের নেতাদের এবং বিরোধী দলের বিধায়কদের কাছেও এটা আমার একান্ত অনুরোধ।’’ এই বিষয়েবিধানসভায় আলোচনা করা উচিত বলেও মত তাঁর।
তবে জিতেনের দাবি ঘিরে শিল্পনগরীর রাজনৈতিক মহলে তরজা শুরু হয়েছে। আসানসোল পুরনিগমের পুরপ্রশাসক তথা তৃণমূল নেতা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনি (জিতেন তিওয়ারি) ঠিকই বলেছেন। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের উন্নয়ন এ ভাবেই করছেন। এবং আসানসোল উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী মলয় ঘটকও এখানকার উন্নয়নে সজাগ রয়েছেন। বামফ্রন্টের আমলে এখানকার কলকারখানা বন্ধ করে দিয়ে আসানসোলকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে নতুন আসানসোলের জন্ম হচ্ছে। তবে মাস্টার প্ল্যান করে আসানসোলের উন্নয়ন করা যেতে পারে। বঞ্চিত হবে না আসানসোল।’’
বামেদের আমলেই আসানসোলের উন্নয়নের কথা ভাবা হয়েছিল বলে দাবি সিপিএমের জেলা নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘আসানসোলের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান ও দলিল তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট। ২০০৯ সালে আসানসোল পুরনিগম দখলের পর সেগুলি তালাবন্ধ করে রেখেছে তৃণমূল। বামফ্রন্ট যে কথা প্রায় ১৫-১৬ বছর আগে বলেছিল, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। মাস্টার প্ল্যান হলে আসানসোলে প্রত্যেক বছর যে বন্যা হচ্ছে, তা হবে না। যানজটের সমস্যা অনেকটাই কমবে। বেকারদের চাকরির সুযোগ হবে। কলকারখানা খুলবে।’’