গ্রেফতার হওয়া দম্পতি।
অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি বাংলার দম্পতি। রেহাই পায়নি তাঁদের বছর দেড়েকের সন্তানও। তাঁরা সত্যিই ভারতের নাগরিক, না কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তা যাচাই করতে এখন বর্ধমান চষে বেড়াচ্ছে বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশ।
প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বেঙ্গালুরুর জেলে রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা পলাশ অধিকারী এবং শুক্লা অধিকারী। সম্প্রতি সেই গ্রামেই এসে ঘুরে গিয়েছেন বেঙ্গালুরুর পুলিশ। পলাশ ও শুক্লার ব্যাপারে পড়শিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দফতরে ঘুরেও দম্পত্তি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে তারা।
তেলে গ্রামে টিনের চালার দু’কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি পলাশদের। পড়শিরা জানান, পলাশ ও তাঁর পরিবারের লোকেরা সকলেই শ্রমিক। একটু ভাল রোজগার হবে, সেই আশাতেই জুন মাসে সপরিবার বেঙ্গালুরু চলে যান পলাশ। তার মাসখানেকের মধ্যেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। পলাশের বোন শম্পা হালদার বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারপুর থানায় সুলিবেলে গ্রামে কায়েন খান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ছিলেন দাদারা। বাবা (পঙ্কজ অধিকারী) ও মা (সবিতা অধিকারী)-ও ওঁদের সঙ্গে গিয়েছিল।’’
পলাশদের আত্মীয় পিন্টু হাওলাদার জানান, দিনে ৩০০-৪০০ টাকার শর্তে কায়েনের অধীনে কাজ শুরু করেন দম্পতি। তাঁর কথায়, ‘‘হোটেল, রেস্তরাঁ থেকে বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ করতেন ওঁরা। সবই ঠিকঠাক ছিল। গত ২৭ জুলাই মাস আচমকাই কায়েনের ডেরায় পুলিশ হানা দিয়ে ওঁদের গ্রেফতার করে।’’ পিন্টু জানান, পলাশের বাবা, মা-কেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্ত্রী এবং দেড় বছরের ছেলে-সহ এখনও জেলে রয়েছেন পলাশ। ছেলে ও বৌমাকে জেল থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু এখনও তার কোনও সুরাহা হয়নি।
তবে সম্প্রতি পলাশদের জেলবন্দি হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে বেঙ্গালুরুর পুলিশ। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার জানান, তিন-চার দিন আগেই রাজ্যে আসে বেঙ্গালুরুর তিন পুলিশ আধিকারিক। ধৃতেরা প্রত্যেকেই ভারতীয় নাগরিক কি না, তা যাচাই করতে বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেন তাঁরা। বিডিওর কথায়, ‘‘পলাশদের ভোটার কার্ড আর আধার কার্ড সঠিক কি না, তেলে গ্রামে ওঁরা কত দিন ধরে আছেন— এ সব জানতে চাওয়া হয়। জামালপুরের ভূমি রাজস্ব দফতর, বর্ধমান দক্ষিণ মহকুমাশাসকের অফিসেও গিয়েছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা।’’ শুভঙ্করই জানান, জামালপুর থানার পুলিশের তরফেও পলাশদের সম্পর্কে বেশি কিছু নথি বেঙ্গালুরুর পুলিশকে পাঠানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পড়শিদের আশা, শীঘ্রই হয়তো ছাড়া পাবেন পলাশরা। বোন শম্পা বলছেন, ‘‘আমরা যত দূর জানি, বেঙ্গালুরুর পুলিশ দাদাদের বিরুদ্ধে কিছুই পায়নি। এ বার হয়তো ওঁরা মুক্তি পাবে।’’