বাঘের আক্রমণে নিহত মৎস্যজীবী দিলীপ সর্দার। নিজস্ব চিত্র।
সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে আবারও বাঘের আক্রমণে মৃত্যু হল এক মৎস্যজীবীর। নিহতের নাম মৎস্যজীবীর নাম দিলীপ সর্দার (৩৫)। তিনি কুলতলির দেউলবাড়ি এলাকার কাঁটামারির বাসিন্দা। দিলীপের পরিবার এবং সঙ্গী মৎস্যজীবীদের দাবি, শনিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগের অন্তর্গত বেনিফেলির জঙ্গলের পাশে বিদ্যার চরে। গুরুতর আহত অবস্থায় বাঘের মুখ থেকে ওই মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করেন সঙ্গীরা। কিন্তু ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
যদিও দিলীপের সঙ্গীদের বয়ান এবং আচরণে ‘প্রকৃত ঘটনাস্থল’ সম্পর্কে সন্দিহান দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগ। বিভাগীয় বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’’ তবে শনিবার রায়দিঘি রেঞ্জের বনকর্মী ও আধিকারিকরা গিয়ে নিহতের পরিবার, সঙ্গী মৎস্যজীবী এবং বন দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মৎস্যজীবীদের ওই দলটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা বনবিভাগ থেকে মাছ ধরার পাস নিয়ে সম্ভবত নিয়ম ভেঙে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় গিয়েছিল। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁরা কেউই রাজি হননি বলে খবর। এর পর বন দফতরের ‘টিম’ বেনিফেলি জঙ্গল ঘুরে বাঘের আক্রমণের কোনও চিহ্ন দেখতে পায়নি বল ওই সূত্র জানাচ্ছে।
দিলীপের পরিবার ও সঙ্গীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার ঝড়খালি থেকে বৈধ পাস নিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে যায় কাঁটামারির ওই মৎস্যজীবী দল। তাঁদের সঙ্গে ছিল দু’টি নৌকা। গত চার-পাঁচ দিন ধরে জঙ্গলে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পর শুক্রবার বাড়ি ফেরার সময় নদীতে ভাটা থাকায় বেনিফেলির জঙ্গলের কাছে বিদ্যার চরে নৌকা নোঙর করে বিশ্রাম করছিলেন তাঁরা। ভোরের আলো ফুটতেই মৎস্যজীবীদের জন্য চা তৈরি হচ্ছিল। নৌকার উপরেই বসে ছিলেন দিলীপ। সেই সময় আচমকা জঙ্গল থেকে একটি বাঘ বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দিলীপের উপর। মাথার পিছনে কামড় বসিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যেতে উদ্যত হয় বাঘ।
তড়িঘড়ি লাঠি ও বৈঠা নিয়ে বাঘের উপর আক্রমণ করেন অন্য মৎস্যজীবীরা। বিভ্রান্ত শিকার ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বাঘ। উদ্ধার করা হয় মৎস্যজীবী দিলীপকে। কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনি। এর পর শনিবার সকালে তাঁর দেহ নৌকায় করে নিয়ে আসা হয় কাঁটামারিতে।
মৃত মৎস্যজীবীর পরিবারের পক্ষ থেকে বন দফতরের কুলতলি বিট অফিসে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সহকারী ক্ষেত্র অধিকর্তা জোনস জাস্টিন বলেন, ‘‘ব্যাঘ্র প্রকল্পের দফতরে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। আমরাও বাঘের হামলার কোনও খবর পাইনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’
হতদরিদ্র পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতেই জঙ্গলে গিয়েছিলেন নিহত দিলীপ। স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে তাঁর। তিনিই ছিলেন পরিবারের রোজগেরে সদস্য। তাঁর মৃত্যুতে কার্যত অসহায় হয়ে পড়ল গোটা পরিবার।