দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রীতা পাল। নিজস্ব চিত্র
তিনিই ছিলেন, বিরোধীদের একমাত্র আশা। কিন্তু সে আশাও রইল না। মহকুমায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে টিকে থাকা একমাত্র বিরোধী প্রার্থী এসইউসিআই-এর রীতা পালও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেন।
মনোনয়নপত্র আরও এক দিন জমা দেওয়া যাবে, হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরে বিরোধীদের অনেকেই আশা করেছিলেন, হয়তো কিছু আসনে তাঁরা প্রার্থী দিতে পারবেন। কিন্তু তা হল না! শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনের পরে মহকুমা প্রশাসনের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেল, কাটোয়া মহকুমায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের পুরোটাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতল তৃণমূল। তবে এই জয় সন্ত্রাসের জয় বলেই অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। শনিবার মহকুমাশাসকের দফতরে দাঁড়িয়ে কাটোয়া ১ ব্লকে জেলা পরিষদের ৪১ নম্বর আসনের এসইউসিআই প্রার্থী রীতাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘শেষরক্ষা আর হল না।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও সিপিএম প্রথম থেকেই শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও বাধার অভিযোগ করেছিল। কিন্তু এসইউসিআইয়ের তরফে কাটোয়া ১, কেতুগ্রাম ১ ও মঙ্গলকোট থেকে জেলা পরিষদের ৪১, ৪৬ ও ৫০ নম্বর আসনে যথাক্রমে রীতা পাল, সত্যনারায়ণ মণ্ডল ও কালীচরণ সর্দার প্রায় নির্বিঘ্নেই মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু এর পরে শুক্রবার কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোটের দুই প্রার্থী তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি রীতাদেবী।
তবে শনিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন রিতাদেবী। তার পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, ‘‘স্টেশন রোডে কাটোয়ায় আমাদের দলের অফিসে এসে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয়, হামলা চালায়। আমাদের দলের এক জনকে রাস্তায় ধরে ভীষণ চাপ তৈরি করা হয়। দেওয়া হয় প্রলোভনের টোপও। তা স্বীকার না করায়, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, কেতুগ্রামের জামালপুরে বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধা বাবা-মাকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সব শেষে তাঁর সংযোজন, ‘‘এ সবের পরে আর কী ভাবে ভোটে লড়ব।’’
তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কারা ওঁর বাড়িতে গিয়ে শাসিয়েছে জানা নেই। আমাদের দল এ সবের সঙ্গে জড়িত নয়।’’ সিপিএম, বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, এসইউসিআই-এর সংগঠন এই এলাকায় প্রায় নেই। তাদের উপরেই যখন এমন হামলার অভিযোগ, তা হলে তাঁদের ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা আন্দাজ করা যায়, এমনটাই বলছেন সিপিএম ও বিজেপি নেতারা। আর তাই এই মহকুমার বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতে গত পঞ্চায়েত ভোটে জয় পেয়েও এ বার প্রার্থী দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের। সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের ফের দাবি, ‘‘কাটোয়ার যে কোনও একটি গ্রামে সুষ্ঠু ভাবে ভোট করতে দিলে আমরাই জিততাম।’’ যদিও সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি-র সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, এলাকায় প্রার্থী দেওয়ার মতো সংগঠনই নেই বিরোধীদের।
এ দিনই কাটোয়া ২ ব্লকের জেলাপরিষদের ৪৪ নম্বর আসন থেকে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করলেন বিদায়ী বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনার। ওই আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন তুলেছিলেন তিন জন। শান্তনুবাবুর কথায়, ‘‘দলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছি।’’