দিনভর দাপাল বাইক বাহিনী

মনোনয়ন পর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে লোকজন নিয়ে এসে সালানপুরের নানা অনুষ্ঠান বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল বিজেপি। সন্ধে নামলেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হুমকি, বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

সালানপুর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০২:৪৮
Share:

উঁকি: বারাবনির এক বুথে। ছবি: পাপন চৌধুরী

ভোটের আগের রাত থেকে টহল শুরু হয়েছিল। সোমবার, ভোটের দিন সালানপুরে দাপিয়ে বেড়াল মোটরবাইক-বাহিনী— অভিযোগ বিরোধী দলগুলির নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসীর।

Advertisement

মনোনয়ন পর্বে ঝাড়খণ্ড থেকে লোকজন নিয়ে এসে সালানপুরের নানা অনুষ্ঠান বাড়িতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল বিজেপি। সন্ধে নামলেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হুমকি, বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। সিপিএম এবং বিজেপি-র অভিযোগ, ঠিক একই রকম ভাবে ভোটের আগের দিন থেকে ঝাড়খণ্ড ও কুলটির লোকজন এসে পৌঁছয় মোটরবাইকে। তারা রবিবার রাত থেকেই সালানপুরে চষে বেড়াতে শুরু করে। রবিবার রাতে দেন্দুয়ার কল্যাণেশ্বরী, মাইথন লেফট ব্যাঙ্ক, ন্যাকড়াজড়িয়ায় গ্রামে টহল দেয় বাইক-বাহিনী।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, সোমবার সকালে দেন্দুয়ায় ইসিএলের হাসপাতাল মাঠে জড়ো হয় প্রায় চারশো বাইক আরোহী। সেখান থেকে তারা নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে। সিপিএমের দখলে থাকা পঞ্চায়েত দেন্দুয়া ও সালানপুরে তাদের বেশি দাপট দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া জিৎপুর-উত্তরামপুর পঞ্চায়েতের লোয়ার কেশিয়া, আছড়া পঞ্চায়েত এলাকাতেও বাইকের দৌরাত্ম্য ছিল।

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ দেন্দুয়ার হদলা গ্রামে বড় বাইক-বাহিনী ঢোকে। দলের প্রার্থী তথা বিদায়ী প্রধান নগেন সোরেন ও তাঁর বাবা জিতেন সোরেনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেই খবর পেয়ে জড়ো হন গ্রামের অনেকে। তির-ধনুক, ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাঁরা রুখে দাঁড়ান। বাধা পেয়ে বাইকের আরোহীরা গুলি ছুড়তে-ছুড়তে পালিয়ে যায় বলে জানান গ্রামবাসীরা।

জেমারি পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর প্রি-প্রাইমারি স্কুলেও মোটরবাইকে করে বহু লোকজন ঢোকে। তাদের নেতৃত্বে ছাপ্পা ভোট হয় বলে বিরোধী প্রার্থীরা দাবি করেন। লোয়ার কেশিয়া বেসিক প্রাইমারি স্কুলে সকাল থেকেই বেশ কিছু বাইকে করে বহিরাগতেরা আনাগোনা করছিল। দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ দেন্দুয়ার মাইথন লেফট ব্যাঙ্ক প্রি-প্রাইমারি স্কুলের বুথে পৌঁছয় বাইকে করে একটি দল। তাদের বুথে ঢুকতে বাধা দেন সিপিএমের লোকজন। সে নিয়ে গোলমাল বেধে যায়। ডিসিপি (এসইবি) কুমার গৌতমের নেতৃত্বে পুলিশের বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এরই মধ্যে বাইক আরোহীরা পালিয়ে যায়। জেলা পরিষদ প্রার্থী শিপ্রা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিপিএম কর্মীরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান।

প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘সালানপুরের দু’টি পঞ্চায়েতে বাইক-বাহিনীর তাণ্ডব ও ছাপ্পা চলেছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের অভিযোগ, ‘‘সালানপুর-বারাবনিতে বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। কাঁকসা, বারাবনির ওলেপুরে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘মিথ্যে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। জেলা জুড়ে আমাদের ১৩ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। তবু আমরা শান্তি বজায় রেখেছি।’’ পুলিশেরও দাবি, বাইক-বাহিনীর তাণ্ডব দেখা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement